১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে বাবর সূচনা করেছিলেন ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের রাজত্ব। এরপর প্রায় দুইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে— অন্তত ১৭১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত— মোগল সাম্রাজ্য শক্তিশালী ও সুসংগঠিতভাবে টিকে ছিল। কিন্তু ইতিহাস জানে, সমস্ত সাম্রাজ্যের এক সময় পতন অনিবার্য। সেই পতনের শুরু হয় ১৭৩৯ সালে, যখন পারস্যের নাদির শাহ এক ভয়ংকর হামলা চালিয়ে দিল্লি লুণ্ঠন করেন। এরপর সাম্রাজ্যের ভিত ধীরে ধীরে টলমল করতে থাকে।

যদিও কাগজে-কলমে দিল্লির সিংহাসনে মোগল সম্রাটদের নাম লেখা থাকত আরও একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাস্তবে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ মোগল সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তির চিহ্ন হয়ে ওঠে। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটিশরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে বহু মোগল বংশধরকে। বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর ও তাঁর দুই পুত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয় বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) রেঙ্গুনে, যেখানে ইতিহাসের এক নিঃসঙ্গ অধ্যায়ে তাঁরা হারিয়ে যান।

• তাহলে আজ, এত বছর পর, কোথায় সেই মোগল রাজবংশের উত্তরসূরিরা? 

• তারা কি এখনও কোথাও টিকে আছেন? 

• কেমন তাদের জীবনযাপন? 

• ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়া এই রাজবংশের রক্তধারার কী চেহারা আজকের দিনে?

—এই বই সেই অনুসন্ধানেরই এক সংবেদনশীল, তথ্যসমৃদ্ধ এবং আকর্ষণীয় উপস্থাপনা।

লেখক নিছক তথ্যভিত্তিক ইতিহাস বর্ণনায় থেমে থাকেননি— তিনি খুঁজে বের করেছেন মোগল বংশধরদের ছায়ায় ঢাকা বর্তমান অস্তিত্ব, তাঁদের জীবনসংগ্রাম, সমাজে অবস্থান এবং আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন। এক ঐতিহাসিক বংশের পতনের পরে তার রক্তবীজ কিভাবে ছড়িয়ে গেল, কিভাবে তারা গোপন, নির্জন জীবনে নিজেদের টিকিয়ে রাখলেন— এসবই ধরা দিয়েছে এই গ্রন্থে, অনেকটা ইতিহাসের অপ্রকাশিত পর্বের দরজা খুলে দেওয়ার মতো।

যাঁরা ইতিহাস ভালোবাসেন, বিশেষ করে মোগল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের অন্তরালের গল্প জানতে চান— তাঁদের জন্য এই বই অনন্য পাঠ্যসঙ্গী।