কে বলেছে, একালের শিশুরা আর বই পড়ে না? দৌড়ের উপর জীবন, স্কুল আর কোচিংয়ের চাপে মুখ থুবড়ে পড়া সময়, তার ফাঁকে আঁকা, সাঁতার, নাচ, গান, পরীক্ষার ভাঁজে ভাঁজে যেন নিঃশ্বাসটুকুও আটকে থাকে। তার ওপরে স্মার্টফোনের ঝলমলে আকর্ষণ, ওটিটি সিরিজের রঙচঙে হাতছানি, আর থ্রিডি গেমসের থাবা! তবু, সমস্ত কিছুর মধ্যেও, সন্ধের আলো ম্লান হতে হতে যখন ছোটো একটা ঘর আলো করে ওঠে স্টাডি ল্যাম্পের নরম আলোয়, তখন সেই আলোর নিচে একখানা গল্পের বই আজও হাতছানি দেয়।

এই সময়েও, যখন রাতঘুমের আগে ছোটো পা-গুলো চুপিচুপি হেঁটে বেড়ায় কল্পনার রাজপথে, গল্পের অলিগলিতে হারিয়ে যায় তাদের মনের মধ্যে একেকটা চরিত্র, তখন বোঝা যায়—গল্প আজও প্রাণে বেঁচে আছে। আর যখন সেই গল্পের রাজ্যে প্রবেশ করেন বাণী বসুর মতো শক্তিমান কথাসাহিত্যিক, তখন তো কথাই নেই। তাঁর কলমে ছোটোদের জন্য রচিত হয় এমন এক জগৎ, যেখানে হাসি, রহস্য, চমক আর ভালোবাসা মিলেমিশে এক অনন্য রূপ নেয়।

তার সঙ্গে এ বইয়ে যুক্ত হয়েছে এই প্রজন্মের অন্যতম বলিষ্ঠ কবি অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝাঁকড়া ছড়া। সেই ছড়ায় আছে ছন্দের আনন্দ, মিলের চমক আর দুষ্টুমির দীপ্তি—যা ছোটোদের মনের তারে টংকার তোলে বারবার। গল্প আর ছড়ার এই মণিকাঞ্চনযোগে তৈরি হয়েছে এমন এক গ্রন্থ, যা কচিকাঁচাদের জন্য শুধু পৃষ্ঠা নয়, একেকটা খোলা দরজা—ফ্যান্টাসির, কৌতুকের, ও মনের নিখাদ মুক্তির।

এই বই শুধু ছোটোদের জন্য নয়, তাদের সঙ্গে থাকা বড়দের মনেও জাগিয়ে দিতে পারে সেই হারানো ছেলেবেলার আমেজ। গল্প আর ছড়ার এই সংকলন যেন এক জাহাজ, যা ভেসে চলে হাসি-মজা-আনন্দের সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে এক অদ্ভুত সুখের ভূখণ্ডে।