(Written By Nandita Mitra, Quoted From Suprokash Facebook Page)

"রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণে বর্ণিত বহু নারীই তো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সীতা, দময়ন্তী, দ্রৌপদীর মতো কিছু চরিত্রই চিরভাস্বর হয়ে আছে। কিন্তু এঁরা ছাড়াও তো আরও অনেক চরিত্র আছে তাঁদের আর কে কবে মনে রেখেছে! লেখকের কৃতিত্ব এখানেই তিনি এমন একজন অকিঞ্চিৎকর চরিত্রকে পাঠকের সামনে এনেছেন যাঁর স্বামী 'দানবীর', 'সত্যবাদী' রাজা হরিশচন্দ্র নামে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু রাজা হরিশচন্দ্রের পত্নী শৈব্যাকে ক'জন আমরা জানি? ক'জন মনে রেখেছি তাঁর চরম লাঞ্ছনা, অপমান, আত্মবলিদানের কথা? 'শৈব্যা কথন' এক নারীর অন্তরের গোপন কুঠুরিতে জমে থাকা কিছু তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, কিছু কথা যা পুরুষশাসিত সমাজের মূলে কুঠারাঘাত করতে বাধ্য। লিঙ্গবৈষম্য, শ্রেণীবৈষম্যের প্রতি এই বই এক তীব্র প্রতিবাদস্বরূপ।সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র তাঁর সত্যরক্ষার্থে পৌরুষের অহমিকায় পত্নী রানি শৈব্যাকে বিক্রি করে দেন এক ব্রাহ্মণের কাছে। এক নিমেষের মধ্যে রানি থেকে শৈব্যা পরিবর্তিত হয়ে যান বিক্রয়যোগ্য পণ্যে। রানির কাতর অনুরোধ উপেক্ষা করে হরিশচন্দ্র চলে যান, পিছন ফিরেও তাকিয়ে দেখেননি। এরপর বালক পুত্রকে নিয়ে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটতে থাকে তাঁর। শেষ পর্যন্ত নিয়তির কাছে হার মানতে হয় তাঁকে।গল্পের মোড়কে লেখা হলেও এই বই এক বৈপ্লবিক আখ্যান। এক তীব্র প্রতিবাদ মিথ্যা অহং-এর বিরুদ্ধে। একদম ভিন্ন আঙ্গিকে লেখক শৈব্যার অন্তরের কথাগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে শৈব্যা একজন রক্তমাংসের নারী, যাঁর তীব্র অনুভূতিপ্রবণ একটি মন আছে, আছে নিজস্ব কিছু যন্ত্রণা। বালক পুত্রকে নিয়ে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, বহু আঘাত সহ্য করে তিনি রাজা হরিশচন্দ্রের মুখোমুখি হতে চাইছেন। তিনি যেন আজকের লড়াকু নারীজাতির এক পূর্বসূরি।

 বইয়ের প্রতিটি শব্দ যেন অগ্নিবাণ। শৈব্যা নিঃসৃত কথাগুলো শুধুমাত্র তাঁর কথা নয়, এগুলো মনে করিয়ে দেয় ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করা সেইসব মেয়েদের যন্ত্রণার কথা যারা দৈনন্দিন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাঁতায় পিষ্ট হচ্ছে বিভিন্নভাবে।"