একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার জীবন ছিল রুটিনে বাঁধা, একদিন হঠাৎ করেই পেয়ে যায় তার স্বপ্নের চাকরির চাবি কাঠি। চাকরি, যা তার জীবনে এনে দেয় এক নতুন দিগন্তের সূচনা, এক নতুন পৃথিবী, এক নতুন জগত। সেখানে প্রতিটি দিন যেন ছিল স্বপ্নের মতো—ঝলমলে আলো, ঝকঝকে বিলাসবহুল পরিবেশ, দামী পোশাক, সুশোভিত অফিসের কেবিন, আর আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। মনে হতে থাকে, এই তো সেই পৃথিবী, যা সে সারা জীবন কল্পনা করেছিল। তার স্বপ্ন, তার আশা, তার কল্পনার রাজ্য। কিন্তু এ এক দ্বৈত পৃথিবী। যতই সে সেই জগতের গভীরে প্রবাহিত হতে থাকে, ততই সে আবিষ্কার করতে থাকে এই উজ্জ্বল আলোর পেছনে এক অন্ধকার ছায়ার উপস্থিতি।

প্রতিটি সুখের আড়ালে থাকা থাকে ক্ষণস্থায়ী দুঃখ, প্রতিটি চমকপ্রদ মুহূর্তের পেছনে লুকানো থাকে অদৃশ্য অসুখ। চাকরি এবং জীবন যাপনের এই আধুনিক দুনিয়ায়, যেখানে সবকিছু একটি প্রদর্শনী, সেখানে কোন স্থান নেই তার নিজস্ব পরিচিতি বা শান্তির জন্য। সমাজের তলায় চাপানো এক বডি শেমিং, আত্মবিশ্বাসের সংকট, মানসিক চাপ এবং আধুনিক জীবনের শিকল—এসবই হয়ে ওঠে তার প্রাত্যহিক জীবন। সেই চকমকি বিশ্বকে ফেলে রেখে, সে যখন অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে এক নতুন মুক্তির পথ খুঁজে পায়, তখন তার চোখে উঠে আসে সঠিক পৃথিবীটিকে আবিষ্কারের এক নতুন রূপ।

দ্য কর্নার টেবিল—এই উপন্যাসটি লেখকের ১২ বছরের হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত। একদিকে, যেখানে চাকরি তাকে নিয়ে যায় এক আলোর ভুবনে, অন্যদিকে সেখানে প্রতিদিনের অন্ধকার, চাপ, এবং তীব্র জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম, তা এক অনবদ্য মিশ্রণ। লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রতিফলিত হতে থাকা অদৃশ্য চাপ, মানুষের সম্পর্কের জটিলতা, এবং জীবনের ক্ষণস্থায়ী সুখের মায়া—এই সবই উঠে এসেছে গল্পের পটভূমিতে।

এটি শুধু একটি চাকরির গল্প নয়, এটি একটি জীবনের গল্প—যেখানে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব লড়াই, সংগ্রাম, এবং সাহসিকতার সাথে প্রতিদিন জেগে থাকে।