"প্রবাসে নাট্যের বশে" – বিশ্ব থিয়েটারের অন্বেষণে

থিয়েটার যখন শুধু মঞ্চের সীমানায় আবদ্ধ থাকে না, বরং বিশ্বব্যাপী তার বিস্তৃতি খুঁজে নেয়, তখন এক অভিনব নাট্যযাত্রার সূচনা হয়। আশিস গোস্বামীর "প্রবাসে নাট্যের বশে" তেমনই এক নাট্যঅনুসন্ধানের দলিল, যেখানে দেশ-বিদেশের থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

থিয়েটারের আন্তর্জাতিক পরিসর

গ্রন্থটির প্রথমভাগে লেখক আমাদের নিয়ে যান কলম্বো, সিওল, ফুজাইরাহের নাট্যমঞ্চে, যেখানে নাট্যচর্চার প্রকৃতি, দর্শন ও পরিবেশ একেবারেই ভিন্নতর। বিশেষত অফ-প্রসেনিয়াম থিয়েটারের অনুশীলন ও তার বহুমাত্রিক রূপ এখানে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

নাট্যের সংকট ও লকডাউনের অভিঘাত

বিশ্বব্যাপী মহামারির অভিঘাত থিয়েটারের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ভাগে লেখক তুলে ধরেছেন করোনাজনিত নাট্যসংকটের বাস্তব চিত্র। কীভাবে স্বল্প-পরিসরে নাট্যচর্চার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল, কীভাবে থিয়েটার তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছে—এই অধ্যায়ে তার এক নির্মোহ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।

নাট্যসমালোচনা ও গবেষণা

তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগে সংকলিত হয়েছে নাট্যসমালোচনা, নাট্যপ্রবন্ধ ও নাট্যসংবাদ। একইসঙ্গে নাট্যবিষয়ক গভীর বিশ্লেষণ পাঠকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। এই অংশে লেখকের নাটক দেখার নিজস্ব পদ্ধতি এবং তার ব্যাখ্যা একটি মূল্যবান সংযোজন।

একাধিক পরিচয়ের সংমিশ্রণ

একই গ্রন্থে লেখক একাধিক ভূমিকায় হাজির হয়েছেন—নাট্যপর্যটক, নাট্যগবেষক, নাট্যচিন্তক, নাট্যসমালোচক ও নাট্যপ্রাবন্ধিক। তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে ধরা পড়ে এক বিস্তৃত নাট্যবিশ্ব, যা থিয়েটারপ্রেমী, গবেষক ও নাট্যকর্মীদের জন্য এক দুর্লভ সম্পদ।

থিয়েটারের বহুমাত্রিক রূপ ও তার আন্তর্জাতিক অন্বেষণের সাক্ষ্য হিসেবে "প্রবাসে নাট্যের বশে" নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।