পাটোলা: ইতিহাস, রাজনীতি ও এক বিস্মৃত শিল্পের গল্প

দ্বাদশ শতাব্দীর চালুক্য রাজবংশের অন্যতম রাজা কুমারপাল, যিনি জন্মসূত্রে রাজপুত্র হয়েও জীবনের প্রথমার্ধে আত্মগোপনে ও নির্বাসনে কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভাগ্যের চক্রে তিনি অধুনা গুজরাটের পাটন (তৎকালীন অনাহিলওয়ারা) রাজ্যের সিংহাসনে বসেন এবং এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন—জালনা রাজ্যের সাতশো পাটোলা বয়নশিল্পীকে নিজ রাজ্যে নিয়ে আসেন ও পুনর্বাসন প্রদান করেন।

কিন্তু কী এই পাটোলা বস্ত্র? কেন এটি এত অনন্য?

পাটোলা বস্ত্র কেবল এক ধরনের পোশাক নয়, এটি এক যুগান্তকারী শিল্প, যার শিকড় গুজরাটে নয়, বরং আরও গভীর ইতিহাসের সাক্ষী। এই বয়ন পদ্ধতি এতটাই জটিল ও সূক্ষ্ম যে বহু দেশ শত চেষ্টা করেও তা আয়ত্ত করতে পারেনি। প্রতিটি শিল্পীকে এই দক্ষতা অর্জনে প্রায় আঠারো বছর সময় ব্যয় করতে হতো, এবং এ কারণে এই শিল্প পারিবারিক পরম্পরায় সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু এক অদ্ভুত সামাজিক রীতির কারণে নারীরা এই শিল্প শিখতে পারতেন না!

যে বস্ত্র একমাত্র নারীদের পরার জন্য তৈরি হতো, সেই বস্ত্র নির্মাণের অধিকার নারীদের ছিল না। পরিবার ও সমাজের গোঁড়ামির কারণে এই ঐতিহ্য শুধু পুরুষদের হাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু সময় বদলায়, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রবাহ বদলে দেয় মানুষের জীবনধারা। আজ, পাটোলা বস্ত্র গুজরাটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প হিসেবে স্বীকৃত, তবে তার প্রকৃত ইতিহাস অনেকেরই অজানা।

এই বই সেই বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাসের খোঁজ করে, যেখানে রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই, সমাজের কঠোর নিয়ম, আর এক অনন্য শিল্পকর্মের লড়াই একসঙ্গে জড়িয়ে আছে। অতীতের ধুলো সরিয়ে উঠে আসে এক চমকপ্রদ কাহিনি—যা পাঠককে শেষ পাতা পর্যন্ত টেনে রাখবে।