পাউলিনা শিজিয়ানের নিকেত্ছে উপন্যাসটি মোজাম্বিকের সমাজ, সংস্কৃতি ও নারীর অবস্থানকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করে। ২০০২ সালে প্রথম প্রকাশিত এই রচনাটি রামি নামের এক নারীর জীবনসংগ্রাম ও আত্ম-উদ্বোধনের কাহিনি। রামি, যিনি একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, বহু বছরের দাম্পত্য জীবনের পর জানতে পারেন যে তার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। এই আবিষ্কার তার জীবনে ঝড় তোলে—বিশ্বাসঘাতকতা, ক্ষোভ ও যন্ত্রণায় তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।

তবে গল্প এখানেই থেমে থাকে না। প্রতিশোধ বা আত্মসমর্পণের পথ বেছে না নিয়ে, রামি নিজের জীবন ও অস্তিত্বকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে—প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে এক অদ্ভুত সহমর্মিতার বাঁধনে তারা জড়িয়ে পড়েন। একসঙ্গে, তারা বহুবিবাহের বাস্তবতা, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিজেদের মধ্যে সংহতির শক্তিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করেন।

উপন্যাসটি শুধুমাত্র এক নারীর বেদনাবিধুর গল্প নয়; এটি ভালোবাসা, আত্ম-অনুসন্ধান এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক অনন্য আখ্যান। শিজিয়ানের লেখনী মোজাম্বিকের সমাজব্যবস্থার জটিলতাকে গভীরভাবে অনুধাবন করে, যেখানে বহুবিবাহ এক সামাজিক বাস্তবতা হলেও নারীরা কীভাবে এই কাঠামোর মধ্যেই নিজেদের শক্তি ও সংহতির সন্ধান পান, সেটাই এই কাহিনির মূল উপাদান।

বইটির একেবারে শুরুতেই একটি কাব্যিক উক্তি রয়েছে, যা গল্পের অন্তর্নিহিত অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে:

"রাতের হৃদয়ে স্বপ্নদের বাস। একেক সময় তারা হয় ফুলের মত রঙিন, অন্য সময় অন্ধকারের ভূতের মত নাচতে থাকে কালো সব পাই…"

এই উপন্যাস কেবল বহুবিবাহের বাস্তবতা তুলে ধরাই নয়, বরং নারী-পুরুষ সম্পর্কের জটিলতা, বিশ্বাসঘাতকতা, নারীদের পারস্পরিক বন্ধন এবং তাদের সংগ্রামের শক্তিকে নতুন আলোয় তুলে ধরে। নিকেত্ছে তাই একাধারে এক গভীর সমাজচিত্র, আবার এক নারীর ক্ষমতায়নের গল্প, যেখানে প্রতিকূলতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আত্ম-উদ্বোধনের সম্ভাবনা।