দেশ ভেঙে যায়।
মানুষও ভেঙে পড়ে।
কখনও ভাঙে মানচিত্রে দাগ কেটে, কখনও বা মনে-মনে।
শিকড় ছিঁড়ে গেলে শুধু গাছ নয়, জীবনের গোটা ভারসাম্যটাই নড়ে যায়।
তবু জীবন থেমে থাকে না।

এই বই সেই না থেমে থাকা সময়ের কথাই বলে—যার প্রতিটি পদক্ষেপে লুকিয়ে থাকে অভিশাপের ছায়া, পেছনে ফেলে আসা ঘর, হারিয়ে যাওয়া ভাষা, আত্মীয় হয়ে ওঠা অপরিচিত, আর অপরিচিত হয়ে যাওয়া প্রিয় মুখ। দেশভাগের দগদগে ঘায়ের নিচে চাপা পড়ে থাকে অসংখ্য চেনা-অচেনা গল্প। এই সংকলন তাদেরই কয়েকটিকে তুলে আনে—নীরবতার ভাষায়, স্মৃতির গন্ধে, শিকড়ছেঁড়া হাহাকার আর ভালোবাসার টানে।

এই কাহিনিতে দেশ আছে—শুধু মানচিত্র নয়, অনুভবের মতো এক দেশ। আছে দেশভাগ—কেবল ইতিহাসের তথ্য নয়, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। আছে পরবাস—যা ভৌগোলিকের চেয়ে অনেক বেশি মানসিক। আর আছে ভালোবাসা—যা অনেক সময় কর্তব্য হয়ে আসে, আবার কর্তব্যের মধ্যে থেকেই হয়ে ওঠে দায়িত্ব, আর একসময়—ভালোবাসা। 

সুভাষিণী, অমিতেশ, অনিন্দিতা, শঙ্কু—তারা কেবল চরিত্র নয়, তারা এক একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি। তাদের বয়ে চলা সম্পর্কের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে এই কাহিনি। তারা রক্তের উত্তরাধিকার নয়, তারা ভালোবাসার উত্তরসূরি।

এই গল্প সময়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প। এই গল্প ভাঙনের মধ্যেও বেঁচে থাকার গল্প। এই গল্প মানুষের—যারা দেশ, ধর্ম, পরিচয়, সীমান্তের গণ্ডি ছাড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে ধরে রাখে। এই বই পড়ে পাঠক ফিরে তাকাবেন, হয়তো নিজেরই অতীতের দিকে। হয়তো কোনও হারিয়ে যাওয়া ঠাকুমার মুখ মনে পড়ে যাবে, হয়তো কোনও অচেনা ভাষায় লেখা একটা চিঠি আবার খুঁজে বের করতে ইচ্ছে করবে। এই গল্প আসলে আমাদের সবার।