পনেরো শতকের বঙ্গদেশ—ধর্ম তখন আর আশ্রয় নয়, বরং হয়ে উঠেছে অস্ত্র। বিভাজনের, দমন-পীড়নের, আর ক্ষমতার হাতিয়ার। হিন্দু সমাজের একটি বড় অংশ তখন দোল খাচ্ছে পীড়নের কাঁটা আর সুবিধাবাদের মোহে—ধর্মান্তরণ ঘটছে দলে দলে। সময়ের প্রেক্ষাপটে চারদিকে কেবল হিংসা, যন্ত্রণা আর বৈরিতার ছায়া।

ঠিক এমন সময়েই জন্ম নেন এক আশ্চর্য শিশু—জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কনিষ্ঠ সন্তান, বিশ্বম্ভর। সময় জানে না, এই শিশুই একদিন হয়ে উঠবে গোটা জাতির এক মোহনীয় আহ্বান। তাঁর আশেপাশে জড়ো হতে শুরু করেন পার্ষদগণ। খুলুঞ্চির ধ্বনি ওঠে শ্রীবাস অঙ্গনে। সংকীর্তনের সুর ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ছাড়িয়ে সমগ্র ভারতে।

এই বই বলছে সেই মানুষটির কথা, যিনি জাতপাতের বেড়াজাল ভেঙে পথে নামলেন প্রেমের বার্তা নিয়ে। যাঁর জীবন কেবল এক ধর্মীয় প্রচারের নয়—বরং তা ছিল এক গূঢ় আধ্যাত্মিক অভিযাত্রা। তিনি কি কেবল বৈকুণ্ঠের জন্য গান গাইতেন? নাকি তাঁর পথ ছিল আরও রহস্যময়, আরও অন্তর্গত, আরও মানবিক?

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের এই আখ্যান কেবল ইতিহাস নয়, এ এক অনন্ত সাধনার খোঁজ। এ এক প্রেমের দর্শন, যেখানে গীত হয় একটাই বার্তা—

“হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামেব কেবলম্।”

এই বই সেই আলো অনুসন্ধানের চেষ্টা, যা জ্বলে উঠেছিল অন্ধকার সময়ে, এক আশ্চর্য মহাপুরুষের হৃদয়ে।