শঙ্কিল পথে চক্রব্যূহে – চার চরণিকের রহস্য অভিযাত্রা

হিমালয়ের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ইউনিভার্সিটির তিন বন্ধু—জয়দীপ, সৌরভ, অর্পণ—আর অর্পণের বোন ঊর্মি, এই চারজন ‘চার চরণিক’ নামে পরিচিত নিজেদের মধ্যে। ট্রেকই যেন তাদের নেশা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিবারই কোনও না কোনও অদ্ভুত রহস্য জড়িয়ে পড়ে তাদের এই অভিযানে, যা সহজ এক পাহাড়ি সফরকে রূপান্তরিত করে চরম অ্যাডভেঞ্চারে।

‘শঙ্কিল পথে চক্রব্যূহে’-তে এবার রহস্যের সূত্রপাত হিমালয়ে নয়, সমতলে—একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু থেকে। মৃত্যুরহস্যের খোঁজ করতে করতে চার চরণিক জড়িয়ে পড়ে বহু দশক ধরে সক্রিয় এক অপরাধচক্রের জালে, যার চেহারা বদলালেও রূপান্তর ঘটে না।

এই চক্র কেবল একটি দল নয়—এ এক ছদ্মবেশী, জটিল সমাজের প্রতিচ্ছবি। লেখক পাঠককে নিয়ে গেছেন উত্তর ভারতের কুমায়ুন অঞ্চলের বরফঢাকা পথে, ওড়িশার গভীর অরণ্যে, আবার কখনও পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক কোনও গ্রামে—আর সেই পথ পেরিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন পাঠককে এমন এক অনুধ্যানের জায়গায়, যেখানে সমাজের বিবর্তন ও মানবমনের রহস্য হাত ধরাধরি করে চলে।

চার চরণিকদের বিশ্বাস, Emerson-এর সেই চিরন্তন উপলব্ধি—"It’s not the destination, it’s the journey"—এই অভিযানের প্রতিটি ধাপে সত্যি হয়ে ওঠে। উপন্যাসে রহস্যের সমাধান যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেই পথের অভিজ্ঞতা, ঘাম, রক্ত, ভয়, প্রশ্ন, আবিষ্কার।

লেখক এক অনবদ্য মুন্সিয়ানায় বুনেছেন গল্পের পরতে পরতে সামাজিক বাস্তবতা, ইতিহাস, দার্শনিক চেতনা আর তরতর করে এগিয়ে চলা এক অ্যাডভেঞ্চার।

‘শঙ্কিল পথে চক্রব্যূহে’ শুধুমাত্র একটি রহস্য উপন্যাস নয়, এটি এক অনুসন্ধান—সময়ের, সমাজের এবং আত্মপরিচয়ের।