কালাচাঁদ শেঠ অ্যান্ড কোম্পানি — এক বাবু, এক স্বপ্ন, এক স্বদেশী জাগরণ

‘আলালের ঘরের দুলাল’-এর লেখক হিসেবে প্যারীচাঁদ মিত্র পরিচিত হলেও, এই বইতে আমরা তাঁকে দেখি এক অন্য আলোয়—উনিশ শতকের বৃটিশ-শাসিত বাংলার হৃদয়ে দাঁড়িয়ে এক নবজাগরণসাধক, এক স্বপ্নদ্রষ্টা দেশীয় উদ্যোক্তা হিসেবে। উত্তর কলকাতার অভিজাত জমিদার পরিবারে জন্ম তাঁর, যেখানে পায়রা ওড়ানো, বাজি পোড়ানো, বাইজি নাচানোই বাবুদের ব্যস্ততা—এই রকম জীবনেই বাকি সময়টা কাটাতে পারতেন প্যারীচাঁদ।

কিন্তু তিনি ছিলেন আলাদা। শিক্ষায় প্রভাবিত ডিরোজিওর চিন্তাধারায়, যুক্তিবাদে ও যুক্তিবোধে দীক্ষিত প্যারীচাঁদ বেছে নিয়েছিলেন এক নতুন পথ—সরস্বতী আর লক্ষ্মীর সহাবস্থানে গড়ে তুলেছিলেন ‘কালাচাঁদ শেঠ অ্যান্ড কোম্পানি’। তিনি বুঝেছিলেন, কেবল সাহিত্য নয়, বাঙালির উন্নয়ন সম্ভব হবে অর্থনীতির হাত ধরেই। দ্বারকানাথ ঠাকুরদের মতো ইংরেজ অংশীদার নিয়ে নয়, তিনি বিশ্বাস করতেন স্বদেশীয় সম্প্রীতিতে। সেই বিশ্বাসে বন্ধু কালাচাঁদ শেঠের নামে খুললেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—বাঙালির হাতে বাঙালিরই প্রথম বিজনেস ফার্ম।

‘কালাচাঁদ শেঠ অ্যান্ড কোম্পানি’ শুধু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়—এ এক প্রতীক, স্বদেশী উদ্যোগের সূচনা বিন্দু। এ সেই কাহিনি, যেখানে ‘বাবু’ পরিচয়ের আড়ালে এক বাঙালি তরুণ দিগন্তে ছুঁড়েছেন সাহসের চাবুক, বাঙালির স্বপ্নে ছড়িয়েছেন স্বনির্ভরতার বীজ।

এই উপন্যাস ইতিহাসের সেই চিরকালীন প্রশ্ন তোলে—শুধু ভোগ নয়, যদি সৃষ্টির আশায় বাবুরা এগিয়ে আসেন, তবে বদলে যেতে পারে এক গোটা জাতির ভবিষ্যৎ। প্যারীচাঁদের মতো ‘আলালের দুলাল’-রা যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন, তবে তারা হয়ে ওঠে স্বপ্নের অভিযাত্রী।