নিশিযোনি – এক রহস্যে মোড়া, আতঙ্ক আর অতল গভীর সত্যের উপাখ্যান।

কয়েক বছর আগে লেখা জনপ্রিয় উপন্যাসিকা শরীরী অশরীরী-তে যে গল্প বলা হয়েছিল, তা ছিল যেন হিমশৈলের কেবল চূড়ামাত্র। মূল ঘটনাগুলো, আসল চরিত্ররা — কিন্তু, সেই উপন্যাসিকায় আসেনি লর্নার প্রসঙ্গ, অনুপম রত্নসম্ভবের প্রসঙ্গ, নিকিতার প্রসঙ্গ, এন্টিক ডিলার অভয় পন্থের প্রসঙ্গ — এঁরা সেই গল্পে ছিল না। সেসব বলা তখন সম্ভব হয়নি, কারণ আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম — এক বিশেষ মানুষকে, এক অদ্ভুত পরিবেশে, হয়তো কিছুটা আচ্ছন্ন অবস্থায় — যে তাঁর মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় না পেরোনো অবধি আমি বাংলায় তাঁর প্রসঙ্গে লিখব না। এখন সে বাধা নেই। নিশিযোনি ১ সেই না-বলা কথাগুলোর, সেই গোপন ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিবরণ। মুন্নারের জঙ্গলে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ, অথচ অলৌকিক অভিযানের অন্তরালের সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে — যে অভিযানে এক মানুষ মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছিলেন। এই উপন্যাস সেই না-দেখা, না-বলা জগতের দরজা খুলে দেয়—যেখানে ভয়, রহস্য, এবং অতিপ্রাকৃতের সীমারেখা মুছে যায়।

যাঁরা শরীরী অশরীরী পড়েছেন, নিশিযোনি তাঁদের জন্য এক আবশ্যিক পাঠ। আর যাঁরা পড়েননি, তাঁদের জন্য এটি এক রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতা।                  ~ লেখক

প্রাককথন

পুলিশ কর্তা শ্রী রাজেন্দ্র পিল্লাইয়ের একটা প্রধান সুবিধে হল এই যে, এই অখ্যাত, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে তাঁকে কেউ চেনে না। সাদা পোশাকে সাধারণের ভিড়ে তাই মিশে যেতে কোনো অসুবিধে হয় না। সন্ধ্যার অন্ধকারের আড়ালে মন্দিরের ঠিক পিছনের রাস্তায় যেখানে কিছু স্থানীয় মাতাল রোজ আসর বসায়, আজ সেখানেই যেতে হবে তাঁকে। অন্তত সেইরকমই খবর এসেছে, ওখানে গেলেই জানা যাবে অনেক কিছু।

রাজেন্দ্র পিল্লাই পুলিশের চাকরিতে আছেন প্রায় পঁচিশ বছর; এই সুদীর্ঘ সময়ে কেরলার বহু পুলিশ স্টেশন, অকুস্থল ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন বিস্তর। চাকরিতে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি থানার দায়িত্ব একসঙ্গে সামলেছেন; খুন, জখম, ডাকাতি, ইত্যাদি বহুরকম অপরাধের মোকাবিলা এবং রহস্যভেদ করেছেন সাফল্যের সঙ্গেই। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে গোপন সূত্রে পাওয়া যে খবরটি তাঁকে দেবীকুলম পুলিশ স্টেশনে নিয়ে এল, সেই ধরনের বিচিত্র অপরাধের সম্মুখীন তাঁর এই দীর্ঘ চাকরিজীবনে কখনো হননি।

ভ্রমণবিলাসী মাত্রেই জানেন, কেরালায় মুন্নার বলে একটি চমৎকার হিল স্টেশন আছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেই হিল স্টেশন। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, মুন্নারের আরও একটি আকর্ষণ হল মশলা, ভেষজগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ, আর কাঠ। বনসম্পদে পরিপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্র বছরের সব সময়েই পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

মুন্নারের থেকে একটু দূরেই দেবীকুলম গ্রাম।....