আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটি দিব্যি বহাল আছে। নরেন্দ্র মোদী মাত্র দশ বছরে সেই সংবি ধানকে অবিকৃত রেখেই ভারতকে কার্যত 'হিন্দু রিপাবলিক'-এ বদলে দিয়েছেন। হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্তির কথা বলে তিনি হিন্দুত্বের জয়ধ্বজা উড়িয়েছেন একের পর এক মন্দিরের সংস্কার আর উদ্বো ধনের কর্মসূচি নিয়ে। সর্বশেষ সংযোজন অযোধ্যায় রাম মন্দির। মন্দিরের শিলান্যাস করেছিলেন স্বাধীনতার মাসে (অগাস্ট, ২০২০)। উদ্বোধন করেছেন সংবিধানের (জানুয়ারি, ২০২৪) মাসে। আসলে সেই উদ্বোধন পর্বটি ছিল ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শিলান্যাস অনুষ্ঠান।

৭৩ বছর আগে গুজরাতে সংস্কার হওয়া সোমনাথ মন্দির রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ উদ্বোধন করতে সম্মতি দিলে আপত্তি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান কোনও একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপাসনাস্থল শিলান্যাস/উদ্বোধন করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি উড়িয়ে মন্দির উদ্বোধ নের অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি।

কিন্তু ৭৩ বছর পর নরেন্দ্র মোদীর রাম মন্দির শিলান্যাস-উদ্বোধনের সিদ্ধান্তে বামপন্থীরা বাদে কোনও মহল থেকেই আপত্তি শোনা যায়নি, এমনকি নেহরুর কংগ্রেসও নয়। আসলে হিন্দুত্বের প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহমত তৈরি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী তাই বিনা বাধায় দিল্লির মসনদ দখল করতে পারছেন। বিরোধীদের বড় অংশই চায়, ভারতের হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে সাংবিধানিক ঘোষণার কাজটিও নরেন্দ্র মোদীর হাত দিয়েই সম্পন্ন হোক।