এই উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে একটি প্রেম, একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং একটি ধর্মীয় আদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্বের নাটকীয় কাহিনি—যা আবর্তিত হয়েছে নবদ্বীপচন্দ্র গোস্বামীর পুত্র রসিকবিহারী ও সহজিয়া ঘরানার কন্যা গোলাপবালার চারপাশে। প্রেম থেকে পরিণয়, আর পরিণয় থেকে প্রতিহিংসার দিকে এগিয়ে চলা এই কাহিনি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাংলার বৈষ্ণব ঐতিহ্যের এক টানাপড়েনময় যুগে।

গোলাপবালার স্বপ্ন বিশাল—সে চায় প্রভু নিত্যানন্দের পত্নী জাহ্নবাদেবীর মতো হয়ে উঠতে, বৈষ্ণবপাটের প্রধানা, বাংলার বৈষ্ণব সমাজের এক অমোঘ শক্তি। তার শ্বশুর নবদ্বীপচন্দ্র গোস্বামী ছিলেন এক ভিন্ন স্বপ্নের অনুসারী—তিনি চেয়েছিলেন বাংলার বৈষ্ণবদের মধ্যে এক ঐক্য আনতে। জাত বৈষ্ণব, গোঁড়া অনুশাসনের পথিকৃৎরা, এবং সহজিয়া ভাবধারার অনুসারীরা যদি এক ছাতার তলায় এসে দাঁড়ায়, তবে সেই সংগঠন এতটাই দৃঢ় হবে যে খ্রিস্টান মিশনারিরা আর সহজে ঢুকতে পারবে না—এই ছিল তাঁর বিশ্বাস।

নবদ্বীপচন্দ্র যখন গোটা বাংলা চষে বেড়িয়ে এই ঐক্য গড়ে তোলার কাজে মন দেন, তখন গোলাপবালাও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে হাতিয়ার করে এই আন্দোলনের শীর্ষে পৌঁছানোর বাসনায় জ্বলে ওঠে। সে ভাবে—শ্বশুরের সংগঠনের বড় পদ নিজের হাতে তুলে নেবে, সারা বাংলায় প্রভাব বিস্তার করবে, এমনকি বৃন্দাবনের মতো পবিত্র ভূমিতেও নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করবে।

কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষার পথে কেবল বাহ্যিক প্রতিকূলতাই নয়, আছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিশ্বাসের সংঘাত, আর আছে তার নিজের রূপান্তর। গোলাপবালা, যে একসময় রসিকবিহারীর স্ত্রী, পরে হয়ে ওঠে মাধবী—তার যাত্রা, তার সংগ্রাম, আর তার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না—এই প্রশ্নই উপন্যাসকে এগিয়ে নিয়ে যায় চূড়ান্ত পরিণতির দিকে।

এই উপন্যাস কেবল ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাহিনি নয়, বরং তা এক যুগের ধর্মীয় আন্দোলন, সংস্কার, সংঘাত, এবং নারী-সত্তার আত্মপ্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক দলিল।