১৯১৪ সালের ২৬ আগস্ট, কলকাতার বাণসিত্তার রোডে অবস্থিত ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রড্ডা অ্যান্ড কোং-এর অস্ত্রভাণ্ডার থেকে এক সাহসী বিপ্লবী দল ৫০টি জার্মান মাউজার পিস্তল ও ৪৬,০০০ রাউন্ড গুলি লুণ্ঠন করে। এই ঘটনাটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি বিপ্লবীদের এক ঐতিহাসিক সাফল্য, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রড্ডা অ্যান্ড কোং ছিল ব্রিটিশ মালিকানাধীন একটি অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, যা কলকাতার ২ নম্বর ওয়েলসলে প্লেসে অবস্থিত ছিল। জুন ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০টি মাউজার সি৯৬ পিস্তল ও ৪৬,০০০ রাউন্ড গুলি অর্ডার করে। এই অস্ত্রগুলি জার্মানি থেকে আমদানি করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শ্রীরিশ চন্দ্র মিত্র (হাবু) ছিলেন অনুশীলন সমিতির সদস্য এবং এই অস্ত্র লুণ্ঠনের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।

২৬ আগস্ট, ১৯১৪ তারিখে শ্রীরিশ মিত্র কাস্টমস হাউস থেকে অস্ত্রের চালান গ্রহণ করেন। তিনি সাতটি বলদগাড়ি নিয়ে রড্ডা অ্যান্ড কোং-এর গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। গাড়িগুলির মধ্যে ১০টি বাক্সের চালানটি হাবু ও তাঁর সহযোগী হারিদাস দত্ত, শ্রীরিশ পাল ও খগেন্দ্র নাথ দাস মোনঙ্গা লেনের দিকে নিয়ে যান। এই চালানটি ছিল ৫০টি মাউজার পিস্তল ও ৪৬,০০০ রাউন্ড গুলি, যা পরবর্তীতে বিপ্লবীদের হাতে পৌঁছায়।

এই অস্ত্রগুলি পরবর্তীতে বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। ১৯১৫ সালের গাদর মুভমেন্ট, ১৯২৫ সালের কাকোরি ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে এই অস্ত্রগুলি ব্যবহৃত হয়। ব্রিটিশ সরকার এই লুণ্ঠনকে "দ্য গ্রেটেস্ট ডে-লাইট রবারি" হিসেবে উল্লেখ করে।

কলকাতার গনেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউতে এই অস্ত্র লুণ্ঠনের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, গিরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি ও হারিদাস দত্তের মূর্তি রয়েছে।

এই বইটি রড্ডা কোম্পানির অস্ত্র লুণ্ঠনের বিস্তারিত ইতিহাস, সংশ্লিষ্ট বিপ্লবীদের ভূমিকা এবং এই ঘটনাটির স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। বিপ্লবী ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।