ভারতের অন্যতম বৃহৎ প্রাক-দ্রাবিড়ীয় জনজাতি গোণ্ড সম্প্রদায়ের জীবন, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক অনন্য কাব্যিক উপাখ্যানের নাম ‘গোণ্ড রামায়ণী’। যদিও নামের কারণে অনেকেই একে বাল্মিকী বা তুলসীদাসী রামায়ণের সম্প্রসারণ বা পরিবর্ত রূপ বলে ভুল করেন, এই আখ্যান আদতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের—ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিন্ন জীবনবোধের নির্যাস।

গোণ্ড ভাষায় সৃষ্ট এই রামায়ণ তাদের নিজস্ব লোকজ ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও মূল্যবোধে গাঁথা। এখানে রাম শুধুই এক ধর্মীয় দেবতা নন, বরং মানবিক বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ এক চরিত্র, যার সঙ্গে গোণ্ড সমাজের দৈনন্দিন জীবন ও সংগ্রামের সেতুবন্ধন ঘটে। এই আখ্যান সংরক্ষণ করে গোণ্ডদের ঐতিহাসিক স্মৃতি, সামাজিক রীতিনীতি, নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগকে।

গোণ্ড রামায়ণ মূলত গান ও নাচের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই শ্রুতিমূলক আখ্যান একটি চলমান ঐতিহ্য, যা যুগে যুগে কণ্ঠে কণ্ঠে রক্ষিত হয়েছে। আর আজ সেই আখ্যান বাংলা ভাষায় প্রথমবারের মতো অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন বাসু আচার্য এবং আরতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই গ্রন্থ কেবলমাত্র একটি মহাকাব্য অনুবাদ নয়—এ এক Anthropological Text, যা গোণ্ড জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়, তাদের বিকল্প দর্শন এবং উপনিবেশিক আধিপত্যের বাইরে থাকা সমাজ-ভাবনার প্রতি পাঠককে নিয়ে যায়।

যাঁরা বিকেন্দ্রিত সাহিত্যের সন্ধানে, লোকজ সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য এই বই এক অমূল্য দলিল।