এই গ্রন্থটি শুধুমাত্র আখাড়া এবং মঠজীবনের একরৈখিক ইতিহাস নয়—এ এক বিস্তৃত ক্যানভাস, যেখানে সাধনার আলোকিত উত্তরাধিকার যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি ধরা পড়েছে সেই আলোর নিচে জমে থাকা দীর্ঘ ছায়া। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা মঠ-মন্দিরগুলির গৌরবময় ইতিহাস, তাদের ভক্তদের অগাধ দানে সৃষ্ট বিপুল ভূসম্পত্তি ও সম্পদের জোগান যেমন এক সময় আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক ছিল, তেমনি পরবর্তী কালে এই সম্পদই হয়ে উঠেছে দ্বন্দ্ব, ষড়যন্ত্র, রক্তপাত ও রাজনৈতিক লোভের প্রধান উপজীব্য।

এই বইয়ের প্রথম অংশে লেখক উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আখাড়ার অন্তর্গত সাধু-সন্ন্যাসীদের ধর্মপ্রচার, ব্যবসা, মহাজনি কিংবা অস্ত্রধারী যোদ্ধা হিসেবে গৌরবময় ভূমিকার আলোচনা করেছেন। পাঠক সেখানে খুঁজে পাবেন এক নিরলস সাধনার ইতিহাস, গুরু-শিষ্যের পবিত্র উত্তরাধিকার এবং একটি আত্মনিবেদিত আধ্যাত্মিক কাঠামোর ছবি।

কিন্তু বইটির দ্বিতীয়ার্ধে পাঠক প্রবেশ করবেন এক রুদ্ধশ্বাস, ঘন অন্ধকার জগতে—যেখানে মোহান্তের গদি রক্ষার্থে চলছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, হত্যা, ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক হাতবদল এবং সাধু-সন্ন্যাসের খোলসে লুকিয়ে থাকা অপরাধের দুনিয়া। লেখক প্রকাশ করেছেন সেই মুখোশ-আড়ালিদের যারা আখাড়া ও ধর্মকে ব্যবহার করছে একমাত্র নিজস্ব ক্ষমতা ও লালসার খাতিরে।

এই বিবরণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাস্তব কিছু কেস স্টাডি, যেখানে উন্মোচিত হয়েছে গৃহীত অপরাধ, বিচারের প্রহসন এবং মঠকে রাজনৈতিক দলে রূপান্তরের কাহিনি। এবং, এই আখাড়াজীবনের আলো-আঁধারির বিশ্লেষণে অবধারিতভাবে এসেছে অযোধ্যার প্রসঙ্গ, এসেছে ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদে রামলালার মূর্তি স্থাপন সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এক বিস্ময়কর ঐতিহাসিক যাত্রার দলিল হয়ে ওঠা এই গ্রন্থ, পাঠককে নিয়ে যাবে প্রায় ১২০০ বছরের ধারাবাহিকতা ভাঙা-গড়ার পথ ধরে—যেখানে আধ্যাত্মিকতার মহিমা, ভণ্ডামির নির্মম মুখোশ এবং ধর্মের নামে রচিত অপব্যবহারের জটিল অনুরণন একসঙ্গে বাজে। এটি শুধু ইতিহাস নয়, এক বিবেকজাগ্রত পাঠ।

আপনি কি প্রস্তুত সেই ইতিহাসের মুখোমুখি হতে, যার সত্য এতদিন আমাদের অন্ধবিশ্বাসের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিল?