কাল বাস করছি এই টালা-বেলগাছিয়া-পাইকপাড়ায়। তবে কি, সত্যি যে কিছুই লিখিনি চাদ্দিকের মানুষদের নিয়ে—যারা ছিল, যারা আছে, তাদের নিয়ে? সেই নানান মানুষের নানান জগত, একটাও কি ছুঁতে পারলাম? প্রায় সত্তর বছর কেটে গেছে এখানে। শিকড়গুলো যেন কংক্রিটের জঙ্গলে চারিয়ে গেছে, তাই আর কী লেখা! একটা জীবন, একটা জনপদ, একটা সমাজ—অথবা সমাজের চেনা বা অচেনা মানুষের গল্প। এখন কি আর তা সম্ভব? কোথাও যেন থেমে গেল এই সময়, যে সময়ের ভেতর একসময় সেসব মানুষের চিহ্ন ছিল, আর আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাচীন কাল।

বিহঙ্গেরা যখন মৃত্যুর আগে পশ্চিমে উড়ে যায়, তখন কি তাদের মধ্যেও একটা অনুভূতির স্থান থাকে? পশ্চিমে সূর্যাস্তের দিকে এক অসমাপ্ত যাত্রা। মানুষেরও কি তাই? সারা জীবন একবার পুব থেকে পশ্চিমে হাঁটি, এবং সেই হাঁটা কখনো থামে না, সকালবেলার সেই হাঁটার মতো। সেই পথ অনুসরণ করেছিলাম আমি, খুঁজতে চেয়েছিলাম জীবনের এক প্রাতঃকাল—একদিনের সূর্যোদয়, অথবা যে সকালগুলোর ছায়া আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

এটা গল্প নয়, নভেল নয়। আত্মকথাও নয়, কারণ এখানে সময়ের অন্তর্গত অনন্ততা আছে, যা ধরে রাখতে চাইলেও তা নিঃশেষ হয়ে যায়। এই হল এক সৃষ্টিছাড়া দিনপঞ্জি, যেখানে চোখে দেখা সত্য আর কল্পনার সত্য একত্র হয়ে জমে থাকে। প্রতিটি শব্দ যেন এক অদৃশ্য সুরে গাওয়া জীবন।