জীবন—এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ, সবচেয়ে অলৌকিক আশ্চর্য। কখন, কীভাবে, কাকে কোন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে, সে নিজেও জানে না। তার আস্তিনে গোঁজানো থাকে শত রহস্য, শত অভিপ্রায়, যার খোঁজ মেলে না সহজে। যেমন পাণ্ডবরা শমিবৃক্ষের কোটরে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল অস্ত্র আর পরিচয়, তেমনি আমরাও আমাদের জীবনের গোপনতম আকাঙ্ক্ষা, ভয় কিংবা সত্যকে জমা রেখে দিই সময়ের অভেদ্য কোনো কোটরে। সেই শমিবৃক্ষের মতোই জীবন—এক অনন্ত আশ্রয়, যার কোলেই লুকিয়ে থাকে আমাদের প্রাপ্য।

এই উপন্যাস সেই জীবনেরই গল্প বলে, যেখানে প্রতিটি চরিত্র এক একটি অস্পষ্ট ছায়ার মতো হেঁটে চলে অক্ষয় এক শমিবৃক্ষের নিচে। মায়ের শ্রাদ্ধের দিনে তুহি হঠাৎ এমন এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়, যা তার জীবনবোধকেই পাল্টে দেয়। অসহায় রণেন, যাকে পুলকিতা মনে করে জীবনের শ্রেষ্ঠ ভরসা, সেই লড়ছে নিজেরই প্রভাবশালী আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। শুভায়ু ও মোহরের সম্পর্ক এক জটিল দোলাচল—যেখানে ভালোবাসা আছে, কিন্তু নির্ভরতা নেই। আর শ্যামল ও আরতির টান? তা যেন এক অনির্বচনীয় সুর—শোনা যায়, ধরা যায় না।

সব শেষে পড়ে থাকে কাগজবুড়ো—এক পাগল, যে শুধু অপেক্ষা করে যায়। কীসের জন্য, কেন—সে নিজেও জানে না।

এই উপন্যাস কেবল কিছু চরিত্র বা সম্পর্কের বিবরণ নয়; এটি এক জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে নিয়তি, বিশ্বাস, অসহায়তা আর প্রেম—all weave together—গড়ে তোলে এক অন্তর্গত, অলিখিত মহাকাব্য।

এই কাহিনি সেই জীবনের কথাই বলে, যে জীবন কখনও বিমুখ করে না, শুধু অপেক্ষা করে—ঠিক সময়ে, ঠিক মানুষের হাতে তুলে দিতে তার প্রাপ্যটুকু।