তন্ত্রসাহিত্য বাংলা ভাষার এক বিস্তৃত ও জটিল ভাণ্ডার। অসঙ্গ, বসুবন্ধু, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান থেকে শুরু করে ব্রহ্মানন্দ গিরি, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, গোপীনাথ কবিরাজ কিংবা পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মনীষীরা তন্ত্রের তত্ত্ব, দর্শন ও প্রয়োগ নিয়ে অনন্য সব গ্রন্থ রচনা করেছেন। আবার সাহিত্যে, বিশেষ করে বাংলা গল্প ও উপন্যাসে, তন্ত্র বারবার ফিরে এসেছে রহস্য ও আধ্যাত্মিকতার আবরণে। কিন্তু তন্ত্র যে আসলে কী, কিভাবে তার জন্ম, কী তার প্রকরণ— এ বিষয়গুলি সহজবোধ্য ভাষায় সাধারণ পাঠকের জন্য তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যায়নি তেমন।

এই অভাব পূরণ করতে পেরেছিলেন সতীন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়। প্রায় ষাট বছর আগে প্রকাশিত তাঁর অসামান্য গ্রন্থ ‘তন্ত্রের কথা’ এক নতুন দিশা এনে দেয়। তন্ত্রের জটিল দর্শন ও গূঢ় সাধনাপথকে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন এমন ভাষায়, যা একাধারে সহজ, প্রাঞ্জল এবং গভীর। এই বই শুধু পাণ্ডিত্যের নিদর্শন নয়— এটি এক সেতুবন্ধন, সাধক ও সাধারণের মধ্যে।

বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা পণ্ডিতসমাজ ও সাধারণ পাঠক উভয়ের কাছেই বিপুল প্রশংসা লাভ করে। কারণ, এতটা সংযত ভাষায়, এতটা স্বচ্ছভাবে তন্ত্রকে বুঝিয়ে বলার প্রয়াস বাংলা সাহিত্যে আগে কেউ করেননি। ‘তন্ত্রের কথা’ শুধু একটি গ্রন্থ নয়— এটি বাংলা ভাষায় তন্ত্রচর্চার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা, যা সতীন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়কে এই বিষয়ে এক অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।