কৃষ্ণশর্বরী

ভয়ের শরীরে জড়ানো কাব্যের মৃদু কম্পন

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ছায়া, হাড়ের বাঁশির কর্কশ সুর আর আতঙ্কের নিস্তব্ধ গদ্যমালা—এই উপাদানগুলো যখন অর্ক চক্রবর্ত্তীর কলমে মিলে যায়, তখন যে ভয় জন্ম নেয়, তা আর কেবল ভয় থাকে না। তা হয়ে ওঠে এক রূপান্তরিত অভিজ্ঞতা—স্নিগ্ধ, শীতল, অথচ গভীরভাবে অস্বস্তিকর।

কৃষ্ণশর্বরী তেমনই এক অনন্য ভয়ের কাব্য, যেখানে বীভৎসতা চিৎকার করে না, বরং মৃদু নিঃশ্বাসে ঢুকে পড়ে পাঠকের মনে। এই বইয়ের প্রতিটি অনুচ্ছেদ, প্রতিটি দৃশ্য যেন অনিবার্যভাবে বোনা এক বিষণ্ন সৌন্দর্যে, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় অজানা, অথচ অদ্ভুতরকম চেনা এক জগতে। এখানে ভয় জাগে, কিন্তু সেই ভয় ছিঁড়ে দেয় না—বরং মোহিত করে।

বুক কাঁপানো চমক নয়, বরং অনুভবের এক দীর্ঘতর শীতল স্রোত বইয়ে চলে অর্কের গদ্যে। এই ভয় এমন, যা পাঠককে স্থির থাকতে শেখায়, প্রতিটি শব্দ পড়তে বাধ্য করে গভীর মনোযোগে। একবার নয়, বহুবার পড়ার মতো এই রচনা পাঠকের মনে গেঁথে যায় একটি গাঢ় রঙের দাগ হয়ে।

কৃষ্ণশর্বরী কেবল ভয়ের বই নয়, এটি সাহিত্যের এক অনবদ্য প্রয়াস, যা ভয়কে রূপ দিয়েছে কবিতার মতো কোমলতায়। পড়া শেষ হলেও, এর শব্দ, এর নিঃশব্দতা, এর ছায়া—সবকিছু রয়ে যায় অনেকদিন ধরে।

এ এক বিরল সৃষ্টি, যে বই পাঠকের বুকের মধ্যে থেকে যায়, ঘুমের মধ্যে চুপিচুপি ফিসফিস করে ওঠে। সত্যিই, এই ভয় ভোলা যায় না—চাইলেও না।