মহাপ্রস্থান

 যাত্রা ফিরে আসার, হিসেব চুকোনোর—কিন্তু এক দাহক প্রস্থানও বটে

সময় পেরিয়ে গেছে অনেক, কিন্তু আশা তো থেমে থাকেনি। প্রিয় অঙ্গদকে ফিরে পাওয়ার অঙ্ক কষতে কষতে, নিজ ভূমির দিকে ধাবমান অসিত জানেও না—সে যে আর্যাবর্ত রেখে গিয়েছিল, তা আর আগের মতো নেই। পেছনে ফেলে আসা ইতিহাসের পথচিহ্ন মুছে গিয়ে রাজনীতির নতুন ছায়ায় ছায়ায় গড়ে উঠেছে এক জটিল সময়।

চেরা রাজা উথিয়ানের মৃত্যুর পরে, রাজা হবার লালসায় দাউদাউ করছে ভেরাপ্পনের দৃষ্টি। তার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেবল রানি নলিনী ও ছোট্ট রাজপুত্র নিদাম। কিন্তু ভেরাপ্পনের মতো পুরুষেরা জানে, কাঁটাচেরা পথ কীভাবে চুপিচুপি পেরোতে হয়।

চোলায় শান্তি ফিরে এসেছে বটে, কিন্তু কারিকালা চায় নিজের ডান পাশে বসাতে এক যোগ্য রানিকে। সে সন্ধান সহজ নয়, বরং প্রবল প্রতিকূলতায় ঘেরা এক আবেগী অভিযান। আর উজ্জয়িনীতে শাসকের অনুপস্থিতিতে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে অরাজকতা। সাতকর্ণী হারিয়ে গেছেন শকদের সম্পদের হাতছানিতে—পেছনে পড়ে রইল ভগ্ন রাজধানী, টলমল রাজপাট।

এই সমস্ত ভাঙাগড়ার মাঝে, অসিতের যাত্রা যেন আর কেবল একজন মানুষকে ফিরে পাওয়ার জন্য নয়—এ এক যুগান্তকারী প্রস্থান, মহাকালের কাছে সকল হিসেব চুকিয়ে দেবার এক চরম প্রস্তুতি। মহাবল, সেই যুবরাজ যে আগুনে ফেলেছিল অঙ্গদকে, আজ নিজেই এক রাজ্যপাটের স্বেচ্ছাচারী রাজা।

মহাপ্রস্থান শুধু ইতিহাসভিত্তিক কল্পগাথা নয়, এটি সময়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি চরিত্রের আত্মজিজ্ঞাসার আখ্যান। এখানে একদিকে প্রেম, অন্যদিকে প্রতিশোধ, কোথাও ক্ষমতার ক্ষুধা আবার কোথাও নির্জন হৃদয়ের আকুতি—সব মিলিয়ে এক মহাসময়িক মোচড়।

শেষে গিয়ে প্রশ্ন থাকে—এই মহাযাত্রা কি আদৌ ফেরা? নাকি এ এক চরম নিরুদ্দেশ?

কারণ একটাই কথা চিরন্তন:

 "মহাকাল কখনও কোনও হিসেব বাকি রাখে না।"

 এই কথার সত্যতাই পাঠক অনুভব করবেন "মহাপ্রস্থান"–এর প্রতিটি পৃষ্ঠায়, প্রতিটি শ্বাসে