স্বদেশী আন্দোলনের সূচনার পর থেকেই ভাগবনপুরের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। সশস্ত্র বিপ্লব, অসহযোগ আন্দোলন, লবণ সত্যাগ্রহ ও আইন অমান্য আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্বে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ভারতের স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে মেদিনীপুর জেলার অসংখ্য সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

এই আত্মোৎসর্গকারী দেশপ্রেমিক বিপ্লবীরা আজও আমাদের জেলার অহংকার। তবু, কালের বিবর্তনে তাঁদের অনেকের অবদান ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে গেছে। এই বিস্মরণ শুধু সময়ের দোষে নয়—এর পেছনে রয়েছে অতীত ইতিহাসচর্চার সীমাবদ্ধতা, গবেষণার অভাব, আর আঞ্চলিক ইতিহাসকে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা। ইতিহাস রচনার লক্ষ্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা নয়; বরং মানুষের অনুভব, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মানবিক দিকটি তুলে ধরাই হওয়া উচিত। আঞ্চলিক ইতিহাসের ক্ষেত্রেও এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রযোজ্য।

ভাগবনপুর অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল অবিস্মরণীয়। 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সময় এই এলাকার মানুষ যেভাবে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের নজির গড়ে তুলেছিলেন, তা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। তাঁদের এই বীরত্বগাথা, দুর্ভোগ, সংগ্রাম ও অবদানের অনেকটাই দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত থেকেছে, বহু সময় তা লিপিবদ্ধও হয়নি।

এই প্রবন্ধটি মূলত আগস্ট আন্দোলনের সময় ভাগবনপুরবাসীর সংগঠন, সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং তার ফলাফল নিয়ে বিশদ আলোচনা করে। একইসঙ্গে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—যেমন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো বিপর্যয়ের মুখেও তাঁদের অটল মানসিকতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার অবিচল প্রকাশকেও এই আলোচনায় গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।