প্রবাসজীবনের কর্মব্যস্ততা তাঁকে সাহিত্য থেকে দূরে রাখতে পারেনি—এই কথার বাস্তব উদাহরণ অজাতশত্রু। ছদ্মনামে লিখলেও, তাঁর লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে এক জীবন্ত চেতনা, আত্মিক টান আর ভাষার প্রতি এক নিঃস্বার্থ অনুরাগ।

'পণ্যকন্যা'-র গল্পসংকলনের পর অজাতশত্রুর নতুন ও সুবৃহৎ উপন্যাস ‘অধিকার’ পাঠকদের সামনে হাজির হয়েছে প্রায় আটশো পৃষ্ঠার বিস্তৃত ক্যানভাসে। এই উপন্যাস কেবল একটি গল্প নয়, এটি এক পরিবার ও তার চারপাশের জগতের অনুভূতির রূপকথা। পলাশ, অনু, সুমি, মাধু, প্রিয়া, দেবু—সব চরিত্র যেন জীবন্ত, যেন এক মহাজাগতিক উদ্যানের রঙিন ফুল, যাদের ব্যক্তিগত সৌরভে এক নতুন মানবিক দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে।

‘অধিকার’ উপন্যাসে প্রেম, হতাশা, প্রীতি, কাম, ত্যাগ—সব একসাথে প্রবাহিত হয়েছে গভীর জীবন-স্রোতের মতো। বিশেষভাবে অলৌকিক নারী চরিত্র পুষ্পার প্রেমমুগ্ধ উপস্থিতি উপন্যাসটিকে অন্য মাত্রা দেয়। ত্রিভুজ প্রেমের মধ্যে থেকেও সম্পর্কের পরিপক্বতা ও সংবেদনশীলতা পাঠককে চিন্তার জগতে টেনে নিয়ে যায়। পলাশের অনুপস্থিতিতেও গল্পের গতিপথ থেমে যায় না—বরং প্রিয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়।

এই উপন্যাস যখন ‘পরম বিশ্বাস’-এ রূপ নেয়, তখন পাঠক বুঝে ফেলেন—এই লেখকের অভিজ্ঞতা, বেদনা, আর প্রবাসজীবনের বিচ্ছিন্নতাও তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গভীরতায় ডুব দিতে দিয়েছে। সাহিত্যের কচকচানি নেই, নেই অতিরিক্ত জটিলতা। বরং সহজ ভাষায় মানবিক সম্পর্কের গভীরে প্রবেশ করে লেখক দেখিয়েছেন জীবনের মাধুর্য ও কষ্টের অপূর্ব মেলবন্ধন।

কলকাতার স্মৃতি, প্রবাসের বাস্তবতা, এবং বাঙালিত্বের নিরবিচ্ছিন্ন অনুভব—এই সবকিছু মিশে তৈরি হয়েছে অজাতশত্রুর অনন্য সাহিত্যভুবন।

বাংলা সাহিত্যে নতুন স্বর, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজছেন? তাহলে ‘অধিকার’ এবং এই সংকলনের অন্যান্য রচনা আপনাকে ভাবাবে, ছুঁয়ে যাবে, হয়তো বদলে দেবে।

[Old Book, copies may carry disputed pages]

[Publication help: Neo Camp Publication, 29/3 Shri Gopal Mullick Lane, Kolkata - 12]