"নির্বাসন" তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীর সপ্তম খণ্ড, যা তাঁর কলকাতা থেকে বিতাড়নের পরবর্তী সময়ের মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার দলিল। ২০০৭ সালে কলকাতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর, তিনি সুইডেনে আশ্রয় নেন। এই বইয়ে তিনি বর্ণনা করেছেন তাঁর নির্বাসনের যন্ত্রণা, পরিচয় সংকট, এবং বিশ্বজুড়ে আশ্রয়হীনতার অনুভূতি।

বইটি প্রকাশের সময় কলকাতা বইমেলায় এর প্রকাশনা বাতিল করা হয় ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিবাদের কারণে। তবে, প্রকাশক People's Book Society বইমেলার বাইরে বইটি প্রকাশ করে, যা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। প্রথম সংস্করণ ১,০০০ কপি প্রকাশিত হলেও, বিক্রির চাপে পুনর্মুদ্রণ করতে হয়।

বিষয়ের গভীরতা ও থিম:

• নির্বাসন ও পরিচয় সংকট:

এই খণ্ডে তসলিমা বর্ণনা করেছেন তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশ, এবং 'দ্বিতীয় মাতৃভূমি' কলকাতা থেকে বিতাড়নের পর, তিনি কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেননি। তিনি কোথাও নিজেকে 'ঘর' হিসেবে অনুভব করেননি, যা তাঁর মানসিক অবস্থা ও আত্মপরিচয় সংকটের প্রতিফলন।

• ভাষা ও সাহিত্যিক পরিচয়:

তসলিমা তাঁর লেখার মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের সংকট ও নির্বাসনের যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর লেখাকে অস্তিত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা পাঠকদের সঙ্গে তাঁর অভ্যন্তরীণ সংযোগ স্থাপন করে।

• মানবিক সম্পর্ক ও বিচ্ছিন্নতা:

এই খণ্ডে তসলিমা ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি ও বিচ্ছিন্নতার বর্ণনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা তাঁর মানসিক অবস্থা ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বৃদ্ধি করে।

ভাষার ধরন ও লেখার শৈলী:

তসলিমার ভাষা এই খণ্ডে আরও সংযত ও গভীর। তিনি তাঁর অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণাকে সরল ও স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেছেন। বইটি ডায়েরি বা চিঠির মতো, যেখানে তিনি নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করেছেন।

বইটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

• নির্বাসনের মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার বর্ণনা।
• নিজের অস্তিত্ব ও পরিচয় সংকটের প্রতিফলন।
• রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি।
• লেখার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণার প্রকাশ।

একটি উদ্ধৃতি:

"আমার কিছু নেই, আমি কোথাও ঘর খুঁজে পাই না।"

"নির্বাসন" তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ খণ্ড, যা তাঁর নির্বাসনের পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রণাকে তুলে ধরে। এই বইটি পাঠকদের মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং নারীর অবস্থান সম্পর্কে গভীর চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।