১৯৮৪—পটনার শিখ-বিরোধী দাঙ্গার বিভীষিকায় পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল এক সম্পূর্ণ পরিবার। লায়লার কাকার পরিবার। মানুষের মুখোশধারী পিশাচেরা তার দিদিকে ঘরের কোণ থেকে টেনে হিঁচড়ে এনে হায়নার মতো ছিঁড়ে খেয়েছিল, আর কিশোর ভাইকে গায়ে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় দৌড় করিয়ে করিয়েছিল এক নিষ্ঠুর মৃত্যুর নাচ। সেই দগ্ধ স্মৃতি, সেই ভয়াবহ রাতের বিভীষিকা বুকের গভীরে পাথরের মতো চেপে রেখে বেড়ে উঠেছিল এক তরুণ—লায়লা।

নায়ক নন, এই লায়লা এক অ্যান্টি-হিরো। বুকভরা প্রতিহিংসা, চোখেমুখে গ্লানিমাখা জেদ আর এক নির্মম লক্ষ্য নিয়ে সে নামল অপরাধের অন্ধকার জগতে। সময়ের সাথে, খনি-শিল্পাঞ্চলের নিষ্ঠুর, রক্তমাখা অর্থনীতি—কোল স্ক্র্যাপের অবৈধ সাম্রাজ্যে সে হয়ে উঠল এক দুর্ধর্ষ নাম—লায়লা বস। কেবল একজন মাফিয়া ডন নয়, সে এক প্রতীক—অবদমিত যন্ত্রণা ও প্রতিশোধস্পৃহার প্রতীক।

এই উপন্যাস ও সংকলনে, লেখক অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় নির্মাণ করেছেন এক রুদ্ধশ্বাস, বাস্তবধর্মী থ্রিলার জগৎ। ঝাড়খণ্ড ও তৎকালীন বিহারের খনি অঞ্চলের ধূসর, বীভৎস, অথচ বাস্তব সমাজচিত্রে ভর করে এগিয়েছে মূল আখ্যান। লায়লা বস-এর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার রক্তাক্ত কাহিনিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমন এক আবহ, যা একদিকে নৃশংসতা আর অপরদিকে অভূতপূর্ব মানবিকতার দ্যুতি বহন করে।

এই সংকলনে আরও রয়েছে একাধিক উপাখ্যান—অপরাধ, ষড়যন্ত্র, নিষ্ঠুরতা, এবং ধ্বংসের মাঝে ক্ষণিকের মানবতা কিংবা আত্মদহন। গল্পগুলো শুধু থ্রিলের খোরাক নয়, সমাজ ও মানুষের অন্ধকারতম কোণগুলোর নির্মম প্রতিফলন।

এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী সংযোজন। এখানে নেই চিরাচরিত নায়কগাথা, নেই রোমান্টিক পুরাণ। আছে কেবল এক অন্ধকার বাস্তবতা—যা আমাদের পাশেই লুকিয়ে থাকে, অথচ আমরা তা দেখতে পাই না। এই বই সেই অদৃশ্য দুনিয়ার দরজা খুলে দেয়, রক্ত, আগুন ও প্রতিশোধের গন্ধ মেখে।