বিদ্বান বনাম বিদুষী একটি ঐতিহাসিক ও সমকালীন প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাস, যেখানে দুটি সমান্তরাল কাহিনি একসাথে এগিয়ে চলে। 

একদিকে আছে খনা – প্রাচীন ভারতের এক জ্ঞানী ও প্রতিভাশালী নারী, যিনি অবজ্ঞা ও নিপীড়নের মুখে দাঁড়িয়েও নিজের মেধা দিয়ে ইতিহাসে স্থায়ী করে গেছেন। অন্যদিকে আছে বর্তমান সময়ের এক শিক্ষিতা নারী মাধবী বসাক, যিনি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি লড়াইয়ে ন্যায়বিচার অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপন্যাসটি বাংলা ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, পুরাতন রীতি-নীতি, এবং জ্যোতিষবিদ্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি এতে নারী অধিকার, হিন্দু সমাজের গঠন, পুরুষতন্ত্র, এবং ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন কুসংস্কার (যেমন: সতীদাহ, উইচ হান্টিং) নিয়ে বিশ্লেষণ আছে। আমাদের বাংলার বিভিন্ন প্রবাদ ও তার সত্যতা মূর্ত হয়ে ওঠে এই কাহিনীতে। সাথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই উপন্যাসের এক মূল প্রসঙ্গ হিসেবে ধরা দিয়েছে এবং তা হল পুরুষতন্ত্র। কিভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সময়ে বিদুষীরা জয়লাভ করেছে এই বই তারই কথা বলে। তবে আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি বিশাল ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে পাশ্চাত্য মানেই মুক্তমনা এবং প্রাচ্য মানেই সংকীর্ণ মনোভাবাপন্ন। সেই মিথও এই বইয়ে ভেঙেছেন লেখক। আমাদের দেশে বিবাহের সময় আদিকালে পুরুষ পক্ষকে পণ দিতে হতো কিন্তু বর্তমানে যে পণপ্রথা আমরা দেখি তা আসলে ব্রিটিশ প্রথা কারণ সেখানে নারী পক্ষকে পণ দিতে হতো। অনেকেই হয়তো জানে, ইউরোপে বহু বছর ধরে উইচ হান্টিং হয়ে এসেছে। মেয়েদেরকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। এটি সেই সব মেয়েদের সাথে করা হতো যারা যুক্তিবাদী হত ও সমান অধিকারের জন্য লড়তো। এসবই প্রমাণ করে পুরুষতন্ত্র কোনো নির্দিষ্ট কাঁটাতারের মধ্যে সীমিত নয়। এ এক বিশ্বব্যাপী রোগ!

প্রীতম বসুর লেখনিতে উঠে এসেছে বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের গভীর ছাপ, পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক সমাজের বাস্তবতা – কলেজ রাজনীতি, র‍্যাগিং, আইন, চিকিৎসা ও জ্যোতিষবিদ্যার মতো জটিল বিষয়। উপন্যাসের অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো এর বহুস্তর চরিত্র – যেমন বেহুলা, মাধবী, বিদ্যাধরী, ধন্বন্তরি কবিরাজ, তথাগত প্রমুখ, যারা গল্পকে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে ধরেছে।

এই বইটি শুধু একটি কাহিনিমূলক উপন্যাস নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক-সামাজিক দলিল, যা পাঠকদের নারী শক্তির ইতিহাস ও বর্তমান সমাজে তার অবস্থান নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।

উল্লেখযোগ্য বিষয়:

• খনা ও বরাহমিহিরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
• বাংলার প্রাচীন প্রবাদ ও তার বাস্তবতা
• পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদুষীদের সংগ্রাম
• প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের কুসংস্কারের তুলনা
• বাংলার পুরাতন ইতিহাস ও ভূগোল
• জ্যোতিষ, চিকিৎসা ও আইনবিদ্যার সমন্বয়

এই বই উৎসর্গ করা হয়েছে মহাদেবকে – যিনি চিকিৎসার দেবতা হিসেবে 'বৈদ্যনাথ' নামেও পরিচিত।