চৌথুপীর চর্যাপদ একটি ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস, যেখানে থ্রিলারের মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীন বাংলার ধর্ম, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার জগৎ। গল্পটি দুইটি টাইমলাইনে এগোয়—একদিকে বর্তমান সময়ের প্রাচীন ভাষা ও লিপি বিশেষজ্ঞ যোজনগন্ধা, অন্যদিকে অতীতের শক্তিশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুণী গন্ধকালী।

গল্পের সূচনা হয় একটি রহস্যময় প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি ও একটি খুনের ঘটনাকে ঘিরে। যোজনগন্ধা, এক ক্যান্সার আক্রান্ত গবেষক, সেই মূর্তির লেখার পাঠোদ্ধারে জড়িয়ে পড়ে এক বিপজ্জনক অভিযানে, যেখানে জড়িয়ে পড়ে নিষ্ঠুর ডন, প্রাচীন পুঁথি, এবং হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস। সেই পুঁথির লেখিকা ছিলেন স্বয়ং গন্ধকালী, যাঁর জীবন এবং জ্ঞান এই উপন্যাসের মূল সুর বয়ে আনে।

বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে:

• সেন ও পাল আমলের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
• তিব্বত, বঙ্গ ও মগধ অঞ্চলের প্রাচীন ধর্মীয় যোগসূত্র
• তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম, সহজযান ও চর্যাপদের বিশ্লেষণ
• প্রাচীন বাংলা ভাষা ও লিপি (বিশেষত সিদ্ধম লিপি)
• মহাভারত, খনা, গৌতম বুদ্ধসহ ঐতিহাসিক/ধর্মীয় প্রসঙ্গ
• নারীকেন্দ্রিক শক্তিশালী চরিত্রের উদাহরণ

গল্পের থ্রিলার অংশ যদিও কিছুটা দুর্বল বলে কেউ কেউ মনে করতে পারেন, তবে ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি একটি রত্নস্বরূপ বই। লেখক প্রীতম বসুর জ্ঞানগভীরতা ও গবেষণার ছাপ গল্পের পরতে পরতে দৃশ্যমান।

উল্লেখযোগ্য চরিত্র:

1. যোজনগন্ধা: একজন সাহসী গবেষক, যিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও সত্যের অনুসন্ধানে অটল
2. গন্ধকালী: অতীতের এক জ্ঞানডাকিনী, যাঁর পুঁথি আজও রহস্য বহন করে
3. হাফি হাবিলদার: অনিচ্ছাকৃত সঙ্গী, কিন্তু মানবিক ও মজার চরিত্র
4. ছেত্রী ও মামাজী: কাহিনির ভিলেন, যারা নৃশংসতার প্রতীক

যারা প্রাচীন বাংলা, বৌদ্ধ ধর্ম, চর্যাপদ, প্রাচীন লিপি, এবং নারীকেন্দ্রিক ঐতিহাসিক উপন্যাসে আগ্রহী, তাদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। যারা স্কুলে বাংলা ইতিহাস বা চর্যাপদ পড়তে ভালোবাসতেন না, তাঁরাও এই উপন্যাসে সেইসব বিষয়কেই আকর্ষণীয় ও জীবন্তরূপে উপভোগ করতে পারবেন। চৌথুপীর চর্যাপদ কেবল একটি উপন্যাস নয়—এটি এক ঐতিহাসিক অন্বেষণ, যা পাঠকদের বাংলার অতীত ও নারীশক্তির প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।