বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র দস্যু মোহন, যাকে আধুনিক ভারতের রবিন হুড বলা হয়, শশধর দত্ত রচিত একটি কাল্পনিক চরিত্র। সে অত্যাচারী ধনীদের অর্থ লুট করে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়, যেমনটি রবিন হুডের কাহিনিতে দেখা যায়।

দস্যু মোহনের সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা এবং ন্যায়পরায়ণতা তাকে পাঠকদের কাছে এক অমর নায়কে পরিণত করেছে। কলকাতার লালবাজারের গোয়েন্দা অফিসার মি. বেকারের চোখে দস্যু মোহন অপরাধী, কিন্তু বাস্তবে সে একজন সমাজসেবী। অত্যাচারী জমিদার, কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম ছিল অবিরাম। সে গরিবদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে, তাদের সাহায্য করে। তার প্রেমিকা রমা, যাকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, তার জন্যও সে বহু বিপদে পড়ে।

দস্যু মোহনের অভিযানে রয়েছে বৈজ্ঞানিক রহস্য, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, এবং রোমাঞ্চকর অভিযান। তার সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তা তাকে এক অনন্য নায়কে পরিণত করেছে। শশধর দত্তের এই ১০ খণ্ডের বইগুলিতে দস্যু মোহনের বিভিন্ন অভিযান ও কাহিনী সংকলিত। প্রথম খণ্ডে মোহনের জন্ম ও শৈশব, পরবর্তী খণ্ডগুলোতে তার বিভিন্ন অভিযান ও রোমাঞ্চকর কাহিনী বর্ণিত। এই সিরিজের মাধ্যমে পাঠকরা মোহনের ন্যায়পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় পাবেন।

শশধর দত্ত রচিত দস্যু মোহন সিরিজের মোট ২০৬টি বই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে । উল্লেখযোগ্য গল্পগুলির মধ্যে -

• "মোহন",
• "কারাগারে মোহন",
• "মোহন ও রমা",
• "রমার বিয়ে",
• "আবার মোহন",
• "রমা-হারা মোহন",
• "নাগরিক মোহন",
• "মোহনের জার্মানী অভিযান",
• "মোহনের অজ্ঞাতবাস",
• "ব্যবসায়ী মোহন" ।

দস্যু মোহনের জনপ্রিয়তা:

দস্যু মোহন সিরিজ বাংলা সাহিত্যের একটি অমর সৃষ্টি। এই সিরিজের মাধ্যমে শশধর দত্ত সমাজের অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এক সাহসী যোদ্ধার কাহিনী তুলে ধরেছেন। দস্যু মোহনের চরিত্রটি পাঠকদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

চলচিত্রে দস্যু মোহন:

১৯৫৫ সালে দস্যু মোহন চরিত্র নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যার নামও ছিল "দস্যু মোহন"। প্রদীপ কুমার এই চরিত্রে অভিনয় করেন, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

দস্যু মোহন সিরিজ বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন। এই সিরিজের মাধ্যমে পাঠকরা একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর অভিযানে মেতে উঠবেন, তেমনি অন্যদিকে ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা পাবেন। দস্যু মোহন শুধু একটি কাল্পনিক চরিত্র নয়, সে আমাদের ন্যায়, সাহসিকতা এবং মানবিকতার শিক্ষা দেয়। তার কাহিনির মাধ্যমে আমরা শিখি যে, ন্যায়ের পথে চলতে হলে অনেক সময় নিজের জীবনকেও বাজি রাখতে হয়। দস্যু মোহনের গল্প আজও পাঠকদের হৃদয়ে জীবন্ত, শশধর দত্তের এই সৃষ্টি আজও পাঠকদের হৃদয়ে অমলিন।