প্রথম খণ্ডে যেখানে কল্পনার পরিসরে রচিত হয়েছিল এক নারীশাসিত রূপকথার রাজ্য মায়াকানন, দ্বিতীয় খণ্ডে সেই কাহিনি বিস্তৃত হয় সময়ের প্রেক্ষাপটে, ক্ষমতার রাজনীতিতে, উত্তরাধিকার ও অস্তিত্বের লড়াইয়ে। সপ্তপর্ণী–র এই অন্তিম অধ্যায়ে রাজ্য বিস্তারের রক্তাক্ত ইতিহাস পেরিয়ে আমরা দেখি এক পরিণত, অভিজ্ঞ ও দৃষ্টি-প্রসারী সম্রাজ্ঞীকে—সপ্তপর্ণী, যিনি একাধারে তিন রাজ্যের অধিপতি এবং এক নারীমন।

রাজ্যবিস্তারের গৌরবগাথা অনেকদিনের পুরনো। এখন প্রশ্ন উত্তরাধিকারের, ভবিষ্যতের। নিজের স্থাপিত সিংহাসনকে উত্তরসূরির হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত সম্রাজ্ঞী, কিন্তু সেই উত্তরসূরি—রাজকুমারী চিত্রাঙ্গদা—তাঁর আদর্শ, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় কতটা প্রস্তুত? পুরুষতান্ত্রিক শক্তির ছায়া কি আবারও আঘাত হানবে মাতৃতান্ত্রিক দুর্গে? নাকি এক নতুন ইতিহাসের জন্ম হবে?

এই উপন্যাসে সময়ের প্রবাহে আমরা প্রত্যক্ষ করি নারীর অবস্থান, তার লড়াই, বুদ্ধি, মনন এবং হৃদয়ের জটিল পরিক্রমা। কাহিনির প্রতিটি বাঁকে প্রতিফলিত হয় নারী-পুরুষ সম্পর্কের চিরকালীন দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস ও ভাঙনের দোলাচল, আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকা গভীর মনস্তত্ত্ব। সপ্তপর্ণী এখানে আর কেবল একজন রানি নয়—তিনি এক প্রতীক, নারী ক্ষমতায়নের, আদর্শ ও উত্তরাধিকারের প্রশ্নে এক চিরন্তন সংগ্রামের মুখ।

সাথী দাসের এই কল্পকাহিনি শুধু একটি উপন্যাসের পরিণতি নয়, বরং এক বৃত্তপথ, যেখানে ইতিহাস, রাজনীতি, প্রেম ও বিশ্বাস ছুঁয়ে যায় পাঠকের হৃদয়কে। নারীসত্তার বিস্তার, ক্ষমতার উত্তরণ, ও অধিকার রক্ষার জ্বালাময় প্রশ্ন নিয়ে সপ্তপর্ণী–র দ্বিতীয় খণ্ড পাঠককে আবার টেনে নিয়ে যাবে সেই জাদুকরী রাজ্যে, যেখানে রূপকথা আর বাস্তবতা মিশে গেছে অনুপম সৃজনে।