‘দূরের পাখি’ একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস, যা এক নারীর একাকীত্ব, স্মৃতি, অভিমান ও সম্পর্কের জটিল সমীকরণকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরে। হেমাঙ্গিনী পেশায় শব্দশ্রমিক—তার লেখা শুধুই দায় নয়, বরং নিঃসন্দেহে একটি নেশা, একটি আত্মমগ্ন পরিত্রাণের পথ। অথচ এই লেখালেখি, যা এক সময় শুরু হয়েছিল নিছক শখ হিসেবে, আজ তার আত্মার অনিবার্য ভাষা হয়ে উঠেছে।

নিজস্ব নির্জন জগতে বসবাস করে হেমাঙ্গিনী, যেখানে সম্পর্কের জটিলতা আর মানুষের অবিশ্বাস ঘন হয়ে জমে আছে। মানুষ বদলে যায়, আর সেই বদল তাকে বারবার মুখোমুখি দাঁড় করায় যন্ত্রণা ও বিস্মৃতির। বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে হেমাঙ্গিনী পছন্দ করে নিজের কল্পনার পরিসরে আশ্রয় নেওয়া। জ্বরের মতো অনুভব, যা শরীরের নয়, বরং মনের ভিতরে জমে থাকা এক অন্যরকম আবেশ, তাকে ঘিরে ধরে—যার শিকড় ছড়ানো এক পুরনো ভালোবাসায়, ধ্রুব নামের এক স্মৃতিমগ্ন পুরুষে।

এই উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায়ে প্রকাশ পায় মধ্যবিত্ত জীবনের সংযম, অবদমন, চুপ করে সয়ে যাওয়া আর মনের গহীনে জমে থাকা না-বলা কথার অনুরণন। হেমাঙ্গিনীর মতো অসংখ্য মানুষ, যারা বাইরে থেকে স্বাভাবিক, কিন্তু ভেতরে পুরোনো ক্ষতের পাঁজর বয়ে বেড়ায়—তাদের অস্তিত্বে যদি কোনও আগন্তুক এসে উপস্থিত হয়, তখন সেই আগমন কি পুরনো ক্ষতকে সারিয়ে নতুন জীবনের ইঙ্গিত দিতে পারে? নাকি সেই আগন্তুক নিজেই হয়ে দাঁড়ায় নতুন কোনও ব্যথার কারণ?

‘দূরের পাখি’ শুধু সম্পর্কের উপন্যাস নয়, এটি এক নারীর অন্তর্জগতের মানচিত্র। লেখকের ভাষা সংবেদী, সংযত এবং গভীর পর্যবেক্ষণশীল। এই উপন্যাসে প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি বাক্য নিঃশব্দ অথচ স্পষ্টভাবে ধরা দেয়, যা পাঠককে ভাবায়, আলোড়িত করে এবং বারবার নিজের মধ্যেই ফিরে তাকাতে বাধ্য করে। ‘দূরের পাখি’ সেইসব মানুষের কাহিনি, যারা কেবল ভালোবাসে না, ভালোবাসা বয়ে বেড়ায় নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থে—অন্তরালের এক অদৃশ্য আলোয়।