“মানুষ সবার বড়ো জগতের ঘটনা, মনে হ'ত, মিছে না এ শায়ের রটনা। 
এখন এ জীবনাকে পবিত্র মেনেছি যখন মানুষ বলে মানুষকে জেনেছি।” — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর — এক সময়াতীত মনীষা, যাঁর সাহিত্য, দর্শন ও মানবতাবোধ আজও আমাদের ভাবনায় আলো জাগায়। তাঁর এই বিশাল চিন্তার জগতে প্রবেশ করেছেন শ্রী গোবিন্দপ্রসাদ ঘোষ, যিনি এই বইয়ে রবীন্দ্রনাথকে কেবল একজন কবি বা দার্শনিক হিসেবে দেখেননি, বরং এক জীবনসঙ্গী, এক বোধের উৎস হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

“নানা আলোকে রবীন্দ্রনাথ” গ্রন্থটি তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের বাইরে গিয়ে হয়ে উঠেছে এক অন্তরঙ্গ ও অনুভবপ্রসূত পাঠ। এখানে নেই তাত্ত্বিক ভার বা দুর্বোধ্য ভাষা — আছে সহজ অথচ গভীর দৃষ্টিভঙ্গি, আছে উপলব্ধির আলোয় রবীন্দ্রচিন্তার এক নতুন ব্যাখ্যা। গান, কবিতা, জীবনদর্শন এবং মানবিক বোধ—এই চার প্রান্তিক ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে লেখক রবীন্দ্রনাথকে দেখেছেন এক বহুমাত্রিক রচয়িতা ও মানবতাবাদী চিন্তকেরূপে। একজন মার্ক্সবাদী দার্শনিকের চোখে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, এক পরিপূরক আলোকধারা। এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রন্থটিকে অন্যরকম করে তোলে — এটি শুধু পাঠ নয়, এক উপলব্ধির যাত্রা।

গোবিন্দপ্রসাদ ঘোষ (১৯১৬–২০০৭): ভাটপাড়ার প্রখ্যাত শিক্ষক, সাহিত্যপ্রেমী ও চিন্তাবিদ। অমরকৃষ্ণ পাঠশালার শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এই মানুষটি আজীবন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের আলোকে জীবনের ব্যাখা খুঁজেছেন। ছিলেন ছাত্রদের প্রিয়, সদালাপী ও মানবিকতায় বিশ্বাসী এক গুরুতুল্য ব্যক্তি। বইটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক এর সম্পাদক উৎস ভট্টাচার্য — লেখকের দৌহিত্রী পুত্র। শৈশবে ‘বুড়োবাবা’র সাহচর্যে যে সাহিত্যজগতে তাঁর প্রথম পদার্পণ, সেই ঋণের পরিপূর্ণ রূপ এই গ্রন্থ সম্পাদনার মাধ্যমে। তাই এটি শুধু একটি প্রাজ্ঞ সম্পাদকের কাজ নয়, বরং এক আত্মিক ও পারিবারিক উত্তরাধিকারের গর্বিত প্রকাশ।

উৎস ভট্টাচার্য: লেখক, কবি ও গবেষক। হরর, তন্ত্র, ডার্ক ফ্যান্টাসি এবং মনস্তাত্ত্বিক সাহিত্যে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে কালনিশ্য, নিষিদ্ধ অভিসার, এক ডজন আলো আঁধারি, এবং আতঙ্কের উৎস কথ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত এই সাহিত্যস্রষ্টার কাজ বেতার, অ্যানিমেশন ও অন্যান্য মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

“নানা আলোকে রবীন্দ্রনাথ ” সেইসব পাঠকদের জন্য, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে শুধু জানতেই চান না — তাঁকে অনুভব করতে চান নতুন চোখে, নতুন আলোয়।