ভয়, ক্ষয় ও প্রতিবাদের উপন্যাস: তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’

দেশভাগের বিভীষিকা কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়—তা আজও ক্ষতচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে দুই বাংলার সমাজচেতনায়। সেই অনিঃশেষ ক্ষরণেরই মর্মন্তুদ ছবি আঁকেন তসলিমা নাসরিন তাঁর উপন্যাস ‘লজ্জা’য়। এই কাহিনি শুধুমাত্র এক পরিবারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধর্মীয় উন্মত্ততার গল্প নয়, এটি এক নিষ্ঠুর সময়ের দলিল—যেখানে মানুষ হয়ে ওঠে পরিচয়বিহীন, আশ্রয়হীন, আর একটি রাষ্ট্র হয়ে ওঠে অচেনা, শত্রুভাবাপন্ন।

উপন্যাসের কেন্দ্রে সুরঞ্জন—বাংলাদেশে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা, বিশ্বাস একটাই—মানুষই বড় পরিচয়। কিন্তু হিন্দু পরিচয়ের কারণে তাকে যেমন সমাজচ্যুত হতে হয়, তেমনি হারাতে হয় শিকড়, নিরাপত্তা, ও পরিচয়ের নিশ্চয়তা। ধর্ম নয়, বরং অন্ধ বিশ্বাস, রাজনীতি ও উগ্র মৌলবাদ যে কতটা নির্মম, ‘লজ্জা’ তার এক অসহনীয় বিবরণ।

তসলিমা নাসরিন এই উপন্যাসে সাহসিকতার সঙ্গে আঘাত হেনেছেন সমস্ত ধর্মীয় গোঁড়ামির বুকে। আক্রমণ করেছেন মুসলিম মৌলবাদকে, আবার তুলে ধরেছেন হিন্দু মৌলবাদও। কোনোরকম পক্ষপাতহীন, তীব্র সত্যবচনের এই সাহসই তাঁকে আলাদা করে তোলে, আর এই কারণেই প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

‘লজ্জা’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি প্রতিবাদের এক নিঃসঙ্কোচ ভাষ্য। ভারতে প্রকাশিত এই সংস্করণে লেখিকা নিজেই উপন্যাসটিকে প্রায় নতুন করে রচনা করেছেন, সংযোজন করেছেন বিস্তৃত পরিসর ও আরও অন্তর্দৃষ্টি। এই গ্রন্থ পাঠকের কাছে হয়ে উঠবে এক রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা—যেখানে আঘাত আছে, রক্ত আছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রয়েছে কলমের নির্ভীক প্রতিবাদ, এবং এক বিবেকবান লেখিকার অপরাজেয় অবস্থান।