ঝঞ্ঝার ভিতর দিয়ে উচ্চারিত শব্দের দিনলিপি: তসলিমা নাসরিনের ‘কবিতাসমগ্র’

তসলিমা নাসরিন—যাঁর নাম উচ্চারণে এখনও অনেকের চোয়ালে টান পড়ে, চোখে ওঠে রাগের কিংবা শ্রদ্ধার আগুন। নারীস্বাধীনতার দাবিতে আপসহীন এই কণ্ঠস্বর শুধু প্রতিবাদেই ক্ষান্ত হননি, জীবনের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে সাহিত্যের পরিসরে গড়ে তুলেছেন এক অনমনীয় স্বর। তাঁর কবিতা তাই শুধু কবিতা নয়, কখনও জ্বলন্ত প্রতিবাদ, কখনও প্রেমে সিক্ত শরীরের আহ্বান, আবার কখনও নির্বাসিত বেদনার নিঃশব্দ চিৎকার।

‘কবিতাসমগ্র’—তাঁর এই সংকলন যেন এক অসম লড়াইয়ের দিনপঞ্জি। শুরুর কবিতাগুলিতে ধরা পড়েছে এক দুরন্ত যুবতীর আত্মাভিসার, যেখানে প্রেম ও শরীর একাকার হয়ে উঠেছে দ্রোহের ভাষায়। পরের কবিতাগুলিতে সেই ভাষা হয়ে উঠেছে আরও তীব্র, আরও নির্ভীক। ধর্ষিতার মুখে বীরত্বের ঘোষণা, নিপীড়িত নারীর মুখে ঘুমহীন রাতের আর্তি—এই সবই তসলিমার কবিতার অন্তর্জালে বাঁধা এক পরিস্রুত জীবনকথা।

‘শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা’ থেকে ‘কিছুক্ষণ থাকো’—এই দুই প্রান্তে বিস্তৃত তাঁর কবিতার যাত্রাপথ যেন সময় ও সমাজের বিরুদ্ধে এক অন্তহীন প্রতিরোধ। প্রেমে তিনি দ্বিধাহীন, প্রতিবাদে নির্মম, স্বদেশ-ত্যাগে নিঃস্ব, তবু এইসব ক্ষয় ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই তিনি নির্মাণ করেছেন এক অনন্য কাব্যভুবন। তাঁর কবিতায় শব্দের শরীর ছুঁয়ে থাকে প্রেমিকের মতো, আবার কখনও জেগে ওঠে বিপ্লবীর মতো।

‘কবিতাসমগ্র’ শুধু পাঠ নয়, এই গ্রন্থ পাঠকের কাছে হয়ে উঠবে সেই জীবনের অনুভব—যেখানে শব্দ মানে অস্ত্র, ভালোবাসা মানে বিদ্রোহ, আর কবিতা মানে এক অবিনশ্বর স্বাধীনতার আর্তি।