অপপ্রথার ঐতিহাসিক উন্মোচন—সতীদাহ ও পণপ্রথার উৎস সন্ধানে সুব্রতা সেনের গবেষণাগ্রন্থ

ভারতীয় সমাজের ইতিহাসে সতীদাহ ও পণপ্রথা—এই দুটি অপপ্রথা যেন যুগের পর যুগ ধরে নারীর অস্তিত্বকে করেছে অবমানিত, সংকুচিত ও নির্যাতিত। কিন্তু এই নির্মম প্রথাগুলি কবে, কীভাবে, এবং কোন সামাজিক, ধর্মীয় ও পুরাণনির্ভর মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠল? সেই গভীর অনুসন্ধানে সুব্রতা সেনের গবেষণাধর্মী প্রয়াস ‘সতীপ্রথা ও পণপ্রথা: উৎস ও বিবর্তনের সন্ধানে’ নিঃসন্দেহে এক অনন্য গ্রন্থ।

দশটি অধ্যায়ে লেখক সতীপ্রথার উৎস, তার পুরাণ ও শাস্ত্রভিত্তিক রূপান্তর, সহমরণ প্রথার পূর্ব ইতিহাস, এবং সতীদাহের ঘৃণ্য অনুষ্ঠানের সামাজিক ও ধর্মীয় অভিঘাত বিশ্লেষণ করেছেন নিখুঁত ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে এই প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, যুক্তি ও প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা—যা ইতিহাসের অন্তঃসলিল ধারার মতো প্রবাহিত থেকেছে সমাজের অভ্যন্তরে।

গ্রন্থের দ্বিতীয় পর্বে লেখক সাতটি অধ্যায়ে পণপ্রথার সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনগত রূপবিকাশের চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রাচীন ভারতের কন্যাপণ থেকে শুরু করে ক্ৰয়াত্মক বিবাহরীতি, আধুনিক পণ আইন, ধর্মশাস্ত্রের ব্যাখ্যা ও নারী-অধিকারচেতনার প্রেক্ষাপট—সব মিলিয়ে এ অংশ হয়ে উঠেছে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এক গুরুত্বপূর্ণ নথি।

সুব্রতা সেনের লেখনী গবেষণালব্ধ, তথ্যসমৃদ্ধ, আবার একইসঙ্গে সুপাঠ্য ও গভীর। সতীদাহ ও পণপ্রথার মতো অপপ্রথা নিয়ে বাংলাভাষায় এমন সুলিখিত, সুবিন্যস্ত ও প্রামাণ্য আলোচনা অত্যন্ত বিরল। ‘সতীপ্রথা ও পণপ্রথা’ তাই কেবল অতীত বিশ্লেষণ নয়—এ এক সময়চেতন সমাজচিন্তার নির্ভরযোগ্য দলিল, যা আজও প্রাসঙ্গিক, চিন্তাজাগানিয়া এবং অবশ্যপাঠ্য।