এই বইটি লেখক প্রফুল্ল রায়-এর শৈশবস্মৃতি নিয়ে লেখা—যা তিনি কাটিয়েছেন দেশবিভাগের আগে, ইছামতি নদীর তীরে বিক্রমপুরের এক অজপাড়া গাঁয়ে। বইটিতে নেই কোনো রোমাঞ্চকর কাহিনি কিংবা নাটকীয়তা, আছে কেবল স্মৃতির মায়াময় টান, যা লেখক পরম মমতা আর আন্তরিকতায় রচনা করেছেন।

ছোট ছোট গদ্যে ধরা আছে তৎকালীন গ্রামীণ জীবনের সরলতা, সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও মানুষের পারস্পরিক আন্তরিকতার খণ্ডচিত্র। পাঠক যেন বইয়ের পাতায় পাতায় দেখতে পাবেন হারিয়ে যাওয়া এক সময়ের বাংলাদেশ—যা আজকের চোখে রূপকথার মতোই মনে হয়।

এই বইয়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার সহজ অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষা, এবং স্মৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের নিঃশব্দ ছায়া। গ্রামের পথঘাট, মেলার দিন, বাড়ির উঠোন, পাড়ার মানুষজন—সবই যেন পাঠকের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

তবে বইটির একটা সীমাবদ্ধতা পাঠকের চোখে পড়বেই—লেখক সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন গ্রামীণ সমাজের অন্ধকার দিকগুলো। সামাজিক অনাচার, বর্ণভেদ, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বা দারিদ্র্যের কঠিন চিত্র এখানে নেই। ধর্মীয় বিভাজনের প্রসঙ্গ এলেও, তার গভীর বিশ্লেষণে লেখক যাননি। হয়তো এ এড়ানো নয়, বরং বেছে নেওয়া—কারণ যখন মানুষ স্মৃতির জলে ডুব দেয়, তখন সে কাঁদা নয়, তুলে আনতে চায় হীরে-মুক্তো।