সমাজ, নৈতিকতা ও ইতিহাসের সাঁকোয় দাঁড়ানো এক সাহসী কণ্ঠস্বর — ‘পরকীয়া এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ’

যদি সাহিত্য সমাজের দর্পণ হয়, তবে ইতিহাস সেই দর্পণে প্রতিফলিত সমাজচিত্রের ব্যাকরণ। আর এই দুইয়ের অন্তঃসলিলা যোগসূত্রকে একাকার করে তুলেছিলেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়—যিনি কেবল বিখ্যাত ইতিহাসবিদ নন, ছিলেন এক গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সাহিত্যিকও।

‘পরকীয়া এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘদিনের বিস্মৃত এক পরিশীলন প্রচেষ্টাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ এবং বিংশ শতকের শুরুতে যখন সাহিত্যে রগরগে অশ্লীলতা এবং যৌনতা প্রবলভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তখন সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন রাখালদাস। সাহিত্যের নৈতিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

এই গ্রন্থের কেন্দ্রবিন্দু ‘পরকীয়া’—যা তৎকালীন সমাজে যৌনতার প্রধান প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিদ্যমান ছিল। তবে শুধু পরকীয়া নয়, একই মলাটে স্থান পেয়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রমণ বৃত্তান্ত, সাহিত্য সমালোচনা, স্মৃতিকথা ও রাজনৈতিক ইতিহাসভিত্তিক রচনাও।

এ এক বহুমাত্রিক সংকলন—যা যেমন ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাঞ্জল ও যুক্তিবাদী। ইতিহাস ও সাহিত্যের প্রান্তভূমিতে দাঁড়িয়ে যে মানুষটি সময়কে বিচার করতেন আদর্শের আলোয়, তাঁর চিন্তার ফসল একত্রে পাওয়া যাবে এই বইয়ে।

‘পরকীয়া এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ’—নিবিড় বিশ্লেষণ ও আত্মিক সততার এক অনন্য দলিল।