উত্তরাপথের পুনর্জাগরণ: ‘পালপুরাণিকা’ এক ইতিহাসভিত্তিক মহাকাব্যিক উপন্যাস

একাদশ শতকের সূচনালগ্ন। ভারতবর্ষ তখন বিপর্যস্ত ও বিভক্ত—উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে বিদেশি আগ্রাসনের কালো মেঘ। গজনির সুলতানের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপে কাবুলের হিন্দুশাহী রাজবংশ গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের অস্তিত্ব পাঞ্জাবের দিকে। কনৌজ শাসন করছে দুর্বল প্রতিহার রাজবংশ, আর প্রাচীন ত্রিশক্তির দ্বন্দ্বে ইতোমধ্যেই হারিয়েছে রাষ্ট্রকূটদের নামগন্ধ। এককালের শক্তিমান কনৌজ আজ আস্থার সংকটে, প্রতিহারের ক্ষমতা সীমিত, এবং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে নতুন নতুন রাজবংশ।

এই অস্থির, বিপন্ন সময়েই পূর্ব ভারতের মগধে পাল বংশ নতুন করে জাগরণের পথে পা রাখে। পতনের অতল থেকে দেশ ও জাতিকে টেনে তুলতে ব্রতী হন সম্রাট মহীপাল। ইতিহাসের এই কঠিন পর্বে তাঁর পাশে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ান তাঁর সুযোগ্য পুত্র, যুবরাজ নয়পাল। পিতা-পুত্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিপক্ব, সুদূরদর্শী—তাঁরা বুঝতে পারেন যে বিভক্ত শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব নয়, প্রয়োজন সমন্বয়ের, প্রয়োজন এক ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষ। তাঁদের লক্ষ্য—সমগ্র উত্তরাপথের রাজন্যদের একত্রিত করে গড়ে তোলা এক সম্মিলিত প্রতিরোধ।

এই উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক মহাকাব্যিক প্রচেষ্টা—যেখানে রাষ্ট্রনির্মাণ, সংঘর্ষ, বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধ মিলেমিশে গড়ে তুলেছে এক প্রাচীন যুগের পুনর্পাঠ। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ‘পালপুরাণিকা’ কেবল একটি রাজবংশের পুনরুত্থানের আখ্যান নয়, এটি এক বৃহত্তর জাতীয় চেতনার জন্মকথা।

‘পালপুরাণিকা’—যাঁরা ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ভালোবাসেন, তাঁদের পাঠ-অনুভবকে সমৃদ্ধ করবে গবেষণার নির্যাসে ভরপুর এই কাহিনি। পাঠকের মনে একদিকে যেমন জাগিয়ে তুলবে অতীতচেতনা, তেমনই সামনে এনে দেবে চিরন্তন প্রশ্ন—বিপদের মুখে জাতি কেমন করে নিজের অবস্থান স্থির করে?