বিদ্রোহের আগুনে জ্বলন্ত এক বেগমের বিস্ফোরক অভিযাত্রা: বেগম বাগী বন্দুক

সেপাই বিদ্রোহ মানেই কি কেবল ঝাঁসির রানি? ইতিহাসের পাতায় বিস্মৃত আরেক জ্বলন্ত নাম—হজরত মহল।বেগম বাগী বন্দুক উপন্যাস সেই বেগমের গল্প, যিনি লখনউয়ের জেনানার নিস্পৃহ পুতুল থেকে হয়ে ওঠেন এক সাহসিনী বিদ্রোহী নেত্রী।

১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের ভয়াবহতায় যখন ওয়াজিদ আলি শাহ দেশ ছেড়ে পালান, তখন তার ফেলে যাওয়া বেগম হজরত মহল দাঁড়ান প্রতিরোধের মঞ্চে। রক্তাক্ত ইতিহাসে নারীর অস্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার লড়াইয়ের এমন উদাহরণ বিরল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে সেপাই বিদ্রোহীরা চিনহটের প্রান্তরে সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞ, আর লখনউ রেজিডেন্সির অন্দরে আটকে পড়ে শত শত ব্রিটিশ সৈন্য ও সাধারণ মানুষ।

এই কাহিনির বিস্তার শুধু যুদ্ধ আর রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, দুঃখ ও প্রতিশোধ—সবকিছুর বিস্ফোরক সংমিশ্রণে রচিত এক বর্ণাঢ্য ও দুঃসাহসিক অভিযান এটি। পাশাপাশি, উপন্যাসে আরেকটি রহস্যে মোড়া অধ্যায় রচিত হয়েছে কোইলোয়ার রেলসেতুকে ঘিরে। এই সেতু তিন মাসের মধ্যে নির্মাণ না হলে বন্ধ হয়ে যাবে ব্রিটিশদের ‘লাইফলাইন’। সেই দৌড়ে সামিল হয় এক বাঙালি যুবক মেঘসন্ধি, যে খুঁজছে তার হারিয়ে যাওয়া পিতা গোলকচন্দ্রকে। কিন্তু নিজের খোঁজে সে জড়িয়ে পড়ে এমন এক ঘূর্ণাবর্তে, যার শেষ হয় নিষ্ঠুর পরিণতিতে।

বেগম বাগী বন্দুক শুধু অতীত নয়, বর্তমানকেও স্পর্শ করে। এখানে উঠে আসে উপনিবেশবিরোধী প্রতিরোধ, নারীর শক্তি, শিল্প-পরিকল্পনা ও ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির সম্মিলিত কাহিনি। ইতিহাস ও কল্পনার মেলবন্ধনে লেখা এই উপন্যাস একাধারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আবেগপ্রবণ পাঠ।

যাঁরা ইতিহাসে লুকিয়ে থাকা অজানা অধ্যায়ের সাহসী কাহিনি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য বেগম বাগী বন্দুক হয়ে উঠবে এক অনবদ্য পাঠানুভব।