দৈবাদিষ্ট—মহাভারতের বিস্তীর্ণ আখ্যানের একটি নিবিড়, রহস্যময় প্রবাহকে কেন্দ্র করে সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের এক আশ্চর্য নির্মাণ। অনন্ত আকাশের মতো প্রসারিত, অতল সমুদ্রের মতো গভীর মহাকাব্য মহাভারতের স্তরে স্তরে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ইঙ্গিত—প্রকাশ্য অথবা অস্ফুট, যাদের পাঠ প্রতিবারই নতুন কিছু উন্মোচন করে। সেই মহাকাব্যের মধ্য থেকেই লেখক তুলে এনেছেন এক উত্তাল, আবর্তমান সময়—যেখানে কৌরব-পাণ্ডবেরা কেবল বালক নয়, যৌবনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাজনীতি ও চক্রান্তের ভয়াল জগতে প্রবেশ করতে চলেছে।

হস্তিনার প্রাসাদে যখন ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ঘনীভূত, তখনই ভারতবর্ষের বৃহত্তর রাজনীতির আকাশে দেখা দেয় এক আশ্চর্য ঝড়ের পূর্বাভাস—যার কেন্দ্রে উঠে আসেন দ্বারকার তরুণ নায়ক, এক মহাতারকা, এক চালক, যার আবির্ভাব কেবল সময়ের দাবি নয়, ইতিহাসের প্রয়োজন। অস্ত্রের ঝনঝনানি, দ্বন্দ্ব, দুশ্চিন্তা ও প্রতারণার ছায়ায় ঘেরা এই উপন্যাসে বহু চেনা চরিত্র উদ্ভাসিত হয় একেবারে নতুন আলোয়—যা পাঠককে বাধ্য করে নতুন করে ভাবতে, নতুন করে দেখতে।

‘দৈবাদিষ্ট’ কেবল একটি পুনর্কথন নয়, বরং নানা প্রাচীন আকরগ্রন্থের ইঙ্গিত, প্রত্ননির্ভর যুক্তি ও সৃজনশীল কল্পনার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এক বাস্তবানুগ, তবু শিহরনজাগানিয়া সাহিত্যিক অভিযাত্রা। এর ভাষা ধ্রুপদী, গতি ঝলমলে, নির্মাণ তীক্ষ্ণ। এটি এমন একটি উপন্যাস, যা একদিকে পাঠককে ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতের গূঢ় গহ্বরে, অন্যদিকে জাগিয়ে তোলে আজকের বাস্তবতার অনুরণন। মহাকাব্যিক সত্য আর মানবিক দ্বিধার এই সীমানায় দাঁড়িয়ে ‘দৈবাদিষ্ট’ হয়ে ওঠে এক বিশাল কাব্য-গাথার অভিনব পুনর্জন্ম