আশাপূর্ণা দেবীর অনন্য সৃষ্টি সত্যবতী ট্রিলজি-র তৃতীয় ও শেষ খণ্ড ‘বকুলকথা’। প্রথম উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’-তে সত্যবতীর দৃঢ়চেতা সংগ্রামী সত্তা, দ্বিতীয় উপন্যাস ‘সুবর্ণলতা’-য় তার মেয়ে সুবর্ণলতার নীরব কিন্তু গভীর প্রগতিচেতনার প্রকাশ—সব মিলিয়ে যে ধারাবাহিক যাত্রার সূচনা, তার পূর্ণতা ঘটে এই তৃতীয় উপন্যাসে।

এই কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র বকুল, সুবর্ণলতার মেয়ে। সাহিত্যজগতে তিনি পরিচিত অনামিকা দেবী নামে—একজন সফল লেখিকা। কিন্তু জীবনের অন্তঃস্থলে বকুল যেন ক্রমাগত এক প্রশ্নে ধরা পড়ে থাকেন। মায়ের অব্যক্ত যন্ত্রণা, দিদিমার সংগ্রাম—সব কিছুর উত্তরাধিকার বহন করে তিনিও চেয়েছিলেন একটি সুস্থ সমাজ, যেখানে নারী তার স্বাধীনতা পাবে সম্মানের সঙ্গে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, বকুল বুঝতে পেরেছেন—স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারের মাঝখানে একটি সূক্ষ্ম বিভাজনরেখা রয়েছে, যা অনেক সময়েই হারিয়ে যায়।

এই উপন্যাসে নারীমুক্তির একটি বৃহৎ ইতিহাসের তৃতীয় প্রজন্মের চোখ দিয়ে দেখা হয়েছে সেই মুক্তির প্রকৃত মূল্য ও বিপর্যয়ের সম্ভাবনা। সামাজিক পরিবর্তনের জোয়ারে বকুল দেখেছেন নারী স্বাধীনতার নামে চলে আসা উগ্রতা, অবিবেচনা আর অনিয়ন্ত্রিত উন্মাদনা। এক গভীর প্রশ্ন এই কাহিনিকে আবর্তিত করে—সত্যবতী ও সুবর্ণলতার সাধনায় গড়া যে নতুন পৃথিবী, তার স্বপ্ন কি অধরা থেকে যাবে?

‘বকুলকথা’ শুধু একটি কাহিনি নয়—এ এক আত্মজিজ্ঞাসা, সময় ও সমাজের নিরিখে নারীর অবস্থানকে নতুন করে বুঝে নেওয়ার উপলক্ষ। আশাপূর্ণা দেবীর কলমে এই উপন্যাস হয়ে উঠেছে এক কঠিন প্রশ্নের আয়না—যেখানে প্রতিফলিত হয় স্বাধীনতার দায় এবং সামাজিক বিবেকের মুখ