অন্ধকারে ঢাকা আলোহীন প্রান্তর: গজেন্দ্রকুমার মিত্রের উপন্যাস ‘কলকাতার কাছেই’

কলকাতা শহরের প্রান্তসীমায়, এক গণ্ডগ্রামে, যেন অদৃশ্য হয়ে থাকা এক নারীর একাকিত্ব, অবহেলা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে উঠে আসে একটি পরিবার ও এক সময়ের নিঃসঙ্গ ইতিহাস। ধুলোর পথ, কাদায় ভরা গলি, আর সূর্যহীন এক ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে শ্যামা ঠাকরুনের বসতবাটি—এক নির্জন, গাছপালায় গুমোট হয়ে থাকা বাড়ি, যেখান থেকে আলোও যেন মুখ ফিরিয়ে নেয়।

শ্যামা ঠাকরুন—এক ছিটগ্রস্ত বৃদ্ধা, যিনি অতীত আঁকড়ে দিন পার করেন। তার মা রাসমনি, এক দুর্ভাগা বিধবা, তিন কন্যা নিয়ে একা কলকাতায় জীবন শুরু করেছিলেন। তিন মেয়ের মধ্যে শ্যামা—যার জীবনের ছায়া দীর্ঘতর হয়েছে এক অনাহূত দাম্পত্যের মধ্য দিয়ে। রাসমনির আত্মমর্যাদা ও কঠোরতা যেমন ছিল অবিচল, তেমনই তার কন্যার জীবনে বারবার নেমে এসেছে অনির্বচনীয় আঁধার।

এই উপন্যাসে গজেন্দ্রকুমার মিত্র শুধু একটি নারীর নয়, বরং এক প্রজন্মের, এক সমাজের মুখ তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন সময়ের চক্রে কীভাবে মানুষের সম্পর্ক, প্রত্যাশা, অবসাদ ও একাকিত্ব বদলে যায়। এখানে উঠে আসে একটি অস্পষ্ট, নেপথ্যে থাকা জীবনের কথা—যা কলকাতার একেবারে কাছেই, অথচ চিরকাল আড়ালে।

‘কলকাতার কাছেই’ এমন একটি উপন্যাস, যা পাঠককে শুধু গল্প দেয় না—সে খুলে দেয় বিস্মৃত অতীতের এক দ্বার। যেখানে নীরবতার ভিতরেই জমে আছে এক নারীর দীর্ঘশ্বাস, এক পরিবারের হেরে যাওয়া অস্তিত্ব, আর এক শহরের অজানা ইতিহাস। পাঠকদের জন্য এটি এক অনন্য মানবিক অনুধ্যান