“...আমি গরীবের মেয়ে ছিলাম। থিয়েটার করতে যাবার আগে থিয়েটার কখনও দেখিনি। কি ক'রে যে থিয়েটারের মধ্যে পড়লেম… একদিন আমাকেও খেলাঘরের হাঁড়ি-কুড়ি, হাতা বেড়ীর মাঝখান থেকে টেনে নিয়ে ন্যাশনাল থিয়েটারের নাচঘরের মাঝখানে ফেলে দিলেন। ছোট্ট মেয়ে, কিছুই জানি না, কখনও অতগুলি ভদ্রলোকের মাঝখানে এরপূর্ব্বে যাইওনি; থিয়েটার যে কি জিনিষ তাও জানি না। ভয়ে ভাবনায় লজ্জায় কেমন একরকম হয়ে গেলেন। ঠিক যেন হংস মধ্যে বক।….” 

                                                       ~~ নটী বিনোদিনী (আমার অভিনেত্রী জীবন)

এক সহজ, নির্মম সত্যবোধে ভরপুর এই আত্মপ্রকাশ, নটী বিনোদিনীর লেখা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আত্মকথা।

নটী বিনোদিনী শুধু একজন অসাধারণ অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক সংগ্রামী নারী, যিনি সমাজের কঠোর সংকোচ ও অবজ্ঞার ভেতর দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এক উজ্জ্বল শিল্পী হিসেবে। এই আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে তাঁর শিল্পীজীবনের উত্থান-পতনের কাহিনি, নাট্যজগতের জাঁকজমক ও গোপন অন্দরমহল, আর তৎকালীন সমাজের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এক অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বিবরণ। গিরীশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, অর্ধেন্দুকুমার, রামকৃষ্ণদেব প্রমুখ যুগান্তকারী মানুষদের সান্নিধ্য ও নাট্যচর্চার বিবরণে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ কেবল এক অভিনেত্রীর গল্প নয়, বরং এক নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার যাত্রা।

রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, "নাটকে লোকশিক্ষে হয়।" সেই শিক্ষার এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত ছিলেন বিনোদিনী। “আমার কথা” শুধু নাট্যপ্রেমীদের জন্য নয়, সমাজ, নারীচেতনা ও সংস্কৃতি-অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের কাছেও এক অনিবার্য পাঠ্যগ্রন্থ।