জৈন তীর্থঙ্কর ও সাধুসন্ত — পূর্বা সেনগুপ্তের মনননির্ভর ও তথ্যসমৃদ্ধ এক অনুপম গ্রন্থ, যা জৈন ধর্মের গভীর দার্শনিক প্রবাহ এবং ইতিহাসবাহী সাধুসন্তদের জীবনচর্চা নিয়ে নির্মিত। প্রাচীন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় পরম্পরা হিসেবে জৈনধর্ম তার নিজস্ব ভাবজগৎ, নীতিবোধ ও তপস্যার আদর্শে বহু শতাব্দী জুড়ে গড়ে তুলেছে এক অনন্য মানবিক ও আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার। এই বই সেই উত্তরাধিকারকে ভাষার পরিসরে ধরতে চেয়েছে নিবিড়ভাবে।

তীর্থঙ্কর — এই শব্দে নিহিত আছে এক অসাধারণ আত্মজয়ীর প্রতিচ্ছবি, যাঁরা মানবজীবনের সংকীর্ণতা পেরিয়ে আত্মার মুক্তির পথ উন্মোচন করেছেন। পূর্বা সেনগুপ্ত এই গ্রন্থে তুলে ধরেছেন চব্বিশজন তীর্থঙ্করের জীবনের মাহাত্ম্য, তাঁদের আধ্যাত্মিক সাধনা, নৈর্ব্যক্তিক দর্শন ও নীতিশ্রেষ্ঠ চিন্তাধারা। একই সঙ্গে তিনি আলোচনায় এনেছেন জৈনধর্মের সাধুসন্তদের কঠোর ব্রত, অচঞ্চল সংযম ও অহিংস জীবনের প্রতি তাঁদের দৃঢ় নিষ্ঠা।

ভাষার ঋজুতা ও বর্ণনার সৌকর্যে এই গ্রন্থ হয়ে উঠেছে নিছক একটি ধর্মতাত্ত্বিক বিবরণ নয়, বরং ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতির একটি অন্তর্মুখী পাঠ। ইতিহাস, পুরাণ, প্রত্নতত্ত্ব ও জীবনচর্চার সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে পূর্বা এই বইয়ে যে নৈপুণ্যে তথ্য ও অন্তর্দৃষ্টি মেলবন্ধন করেছেন, তা পাঠককে ভাবনার গভীরে নিয়ে যায়।

'জৈন তীর্থঙ্কর ও সাধুসন্ত' বইটি শুধু ধর্মানুরাগীদের জন্য নয়—যে কোনো আগ্রহী পাঠকের জন্য এটি এক অপূর্ব পাঠানন্দ ও জ্ঞানান্বেষণের দরজা খুলে দেয়, যেখানে স্পর্শ করা যায় ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার এক নিরবিচ্ছিন্ন ধারা