হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের সম্পূর্ণ সংকলন — শিবরামের অনুমোদিত রম্যজগতে প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রবেশ

বাংলা সাহিত্যের রম্য ধারায় যাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই হয়ে আছে, তিনি শিবরাম চক্রবর্তী। আর তাঁর কলমে সৃষ্ট হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন জুটি যেন সেই রসবোধের চূড়ান্ত প্রকাশ। ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক, চুটকি এমনকি ছড়ার ছন্দেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই দুই চরিত্রের দুরন্ত কীর্তি, মধুর বোকামি আর নিপুণ কৌতুকবোধ। কেবল শিশুপাঠ্য নয়, এই সিরিজে এমন অনেক লেখা আছে যা পরিপক্ব পাঠকের মনেও রস ও ব্যঙ্গের সূক্ষ্ম আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।

তবু দুর্ভাগ্যের কথা, শিবরামের অন্যান্য বহু লেখার মতোই এই রচনার বড়ো অংশটাই হারিয়ে গিয়েছিল কালের ধুলোয়। ‘অমনিবাস’, ‘সমগ্র’ ইত্যাদি নামে যে সংকলনগুলি ছাপা হয়েছে, তার কোনোটিই ছিল না সম্পূর্ণ—কখনও কিছু বাদ পড়েছে, কখনও এক গল্পই এসেছে একাধিক নামে, নানা আকারে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এই জনপ্রিয় জুটির কাহিনিগুলির নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণাঙ্গ পাঠ অধরাই থেকে গিয়েছে পাঠকদের কাছে।

অবশেষে সেই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এল ‘বুক ফার্ম’। শিবরাম চক্রবর্তীর প্রকৃত উত্তরাধিকারীর অনুমতিসাপেক্ষে এই প্রথমবার হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনকে নিয়ে রচিত সমস্ত কাহিনি খণ্ডে খণ্ডে সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে, সম্পূর্ণ অনুমোদিত একটি রূপে।

আর এই সংকলনের সৌন্দর্য আরও পূর্ণ হয়েছে শৈল চক্রবর্তীর আঁকা মূল অলংকরণগুলির উপস্থিতিতে—যা শিবরাম-শৈল যুগলের সেই স্বর্ণযুগীয় সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ চিহ্ন হয়ে আজও আমাদের স্মরণে জাগরুক।

এ এক সাহিত্যিক পুনরুদ্ধার, এক সাংস্কৃতিক প্রয়াস। এই সংকলন শুধু এক লেখক বা চরিত্রদ্বয়ের ইতিহাস নয়, এক সমগ্র পাঠকসমাজের প্রিয় হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনকে নতুন করে আবিষ্কারের দরজা খুলে দিচ্ছে—প্রথমবার, সম্পূর্ণভাবে।