বাংলার প্রথম মৌলিক সায়েন্স ফিকশন কমিক্স — ময়ূখ চৌধুরীর ‘আগন্তুক’ এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন

যেখানে সায়েন্স ফিকশন মানেই ছিল এইচ. জি. ওয়েলস কিংবা জুল ভার্নের অনুবাদ, সেখানে এক সময় বাংলা ভাষায় নিজস্ব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি রচনার পর tradition গড়ে উঠেছিল বটে—তবে ছবির মাধ্যমে, অর্থাৎ কমিক্স বা গ্রাফিক নভেলের আকারে এই ধারার সূচনা ঘটেছিল এক যুগান্তকারী সৃষ্টির হাত ধরে। শিল্পী ময়ূখ চৌধুরী, যাঁর প্রকৃত নাম শক্তিপ্রসাদ রায়চৌধুরী, রচনা করেছিলেন বাংলার প্রথম মৌলিক, সিরিয়াস ও রিয়েলিস্টিক সায়েন্স ফিকশন কমিক্স—আগন্তুক।

১৯৭০ সালে একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে এই ব্যতিক্রমী রচনা। কাহিনি, চিত্রনাট্য, অলংকরণ—সবই এককভাবে সৃষ্টি করেন শিল্পী নিজে, যা বাংলা কমিক্স ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। গল্পের সূচনা ঘটে এক শীতের সন্ধ্যায়, কলকাতার এক বক্সিং ক্লাবে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাজাত বাস্তবতা ও কাল্পনিক বৈজ্ঞানিক অন্বেষণের যে অনন্য মেলবন্ধন এই কমিক্সে দেখা যায়, তা শিল্পীর জীবনকথার প্রতিফলন—যেখানে তরুণ বয়সে বক্সিংয়ের চর্চা, রাজনৈতিক উত্তেজনায় বিপন্ন কলকাতার বাস্তবতা, আত্মরক্ষার অনুশীলন ও সাহসিকতার অনুরণন মিশে গেছে বৈজ্ঞানিক কল্পনার ছায়ায়।

‘আগন্তুক’ শুধু একটি কমিক্স নয়, এটি বাংলা গ্রাফিক সাহিত্যের ইতিহাসে এক মাইলফলক। কারণ এই প্রথম কোনও শিল্পী নিজের জীবনানুভব ও কল্পনার সম্মিলনে তৈরি করেছিলেন এমন এক গ্রাফিক নভেল, যা আজও পাঠককে অবাক করে তার গভীরতা ও কল্পনার ব্যাপ্তিতে।

বিজ্ঞান, সমাজ ও আত্মরক্ষার গল্প যখন একসাথে চলে—তখনই জন্ম নেয় এমন এক অনন্য সৃষ্টির, যা কালো-সাদা কালি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় সময়ের সীমার বাইরে। আগন্তুক সেই শক্তিশালী যাত্রার নাম, যার পাতায় পাতায় লেখা আছে বাংলার প্রথম মৌলিক সায়েন্স ফিকশন কমিক্সের গৌরবগাথা।