এই গ্রন্থটি এক বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক সাধনার ফল। লেখক প্রায় কুড়ি বছর ধরে নাম-স্মরণ ও নাম-ধ্যানে নিয়োজিত থেকে যে অভিজ্ঞতা ও অনুভব অর্জন করেছেন, তারই পুণ্যপ্রকাশ ঘটেছে এই বিষ্ণুসহস্রনাম পুস্তকে। এখানে সংকলিত হয়েছে পরমেশ্বরের অজস্র পবিত্র নাম — যা মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত, রামায়ণ, বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে গৃহীত। এই পুস্তকের রচনাকাল প্রায় দশ বছর। লেখা শুরু হয় ফাল্গুন মাসে, শুক্লানবমীর দিন—৫ই মার্চ ১৯৯০ সালে, এবং সমাপ্ত হয় গুরুনানক পূর্ণিমার পূর্বে, নভেম্বর ২০০০ সালে।

বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও ভূখণ্ডে ঈশ্বরের নানা নাম প্রচলিত। এই নামগুলি কেবল উচ্চারণের বিষয় নয় — প্রত্যেকটি নামের মধ্যেই নিহিত আছে এক গভীর তাৎপর্য, এক অনন্ত যোগ। সেই কারণেই প্রতিটি নামের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এই পুস্তকে সংযোজন করা হয়েছে, যাতে পাঠক শুধুমাত্র পাঠেই নয়, ভাবনাতেও ঈশ্বরের সান্নিধ্য অনুভব করতে পারেন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই বইতে বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রের অর্থ ও ব্যাখ্যা বাংলায় পরিবেশিত হয়েছে। যদিও এই স্তোত্রটি দক্ষিণ ভারত ও মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয়, বাংলায় এর প্রচার তুলনামূলকভাবে কম। সেই অভাব পূরণ করতেই এই প্রয়াস। এই পুস্তকের ব্যাখ্যা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং সর্বজনীন ও ধর্মনিরপেক্ষ ভঙ্গিতে রচিত। প্রাচীন শংকরাচার্য্যকৃত সংস্কৃত টীকাকে ভিত্তি করে লেখক এখানে তাঁর নিজস্ব উপলব্ধির আলোকে এক বিশুদ্ধ ধারায় তা উপস্থাপন করেছেন।

এই গ্রন্থটি শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয় — ধ্যান, মনন ও অনুভবের জন্য। পাঠককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, একসাথে বহু পৃষ্ঠা পড়ে শেষ করে দেওয়ার চেয়ে ধীরে ধীরে, প্রতিটি নামের অর্থ ও ভাব উপলব্ধি করে পড়লে তবেই প্রকৃত লাভ হবে। এই গ্রন্থটি সেই সব পাঠকের জন্য, যাঁরা ঈশ্বরচিন্তন, নামস্মরণ ও আত্মিক আনন্দের অন্বেষণে ব্রতী।