বাংলা রোমাঞ্চ সাহিত্যের জগতে হেমেন্দ্রকুমার রায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর গল্পে যে রহস্য, রোমাঞ্চ, অ্যাডভেঞ্চার ও বিস্ময়বোধ মিলেমিশে থাকে, “বাঁদরের পা” তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ। গল্পটি এমনভাবে নির্মিত যে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠক সমানভাবে মজা পান এবং উত্তেজনা যেন আবার ফিরে পান।

“বাঁদরের পা” মূলত এক অনন্য অ্যাডভেঞ্চার–গল্প, যেখানে কৌতূহল এক অদ্ভুত প্রত্নবস্তু ঘিরে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়ে। গল্প শুরু হয় সাধারণ, দৈনন্দিন পরিবেশ থেকে, কিন্তু ধীরে ধীরে রহস্যের জাল ঘন হতে থাকে—বাঁদরের পা নামের বিস্ময়কর বস্তুটির সূত্র ধরে খুলতে থাকে এক অজানা দুনিয়ার দরজা। হেমেন্দ্রকুমার রায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ কৌশলে গল্পটির গতি ধরে রেখেছেন—এক মুহূর্তও পাঠকের মনোযোগ বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই।

গল্পে রহস্যের পাশাপাশি আছে হালকা হাস্যরস, বন্ধুত্বের উষ্ণতা এবং বিপদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস—যা হেমেন্দ্রকুমারের লেখার পরিচিত বৈশিষ্ট্য। চরিত্রগুলোর সরলতা, খোলামেলা চেহারা, আর প্রতিটি ঘটনার মসৃণ বর্ণনা—সব মিলিয়ে “বাঁদরের পা” পাঠকের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে। চরিত্ররা যখন বিপদের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের বুদ্ধি, সাহস ও আন্তরিকতার প্রকাশ গল্পকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

বইটির সবচেয়ে বড় শক্তি এর গল্প বলার ভঙ্গি। লেখক পাঠকের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপিত করেন, কিন্তু একইসঙ্গে গল্পকে কখনোই জটিল করে তোলেন না। রহস্যের আবহ, থ্রিলের চাপ, আর পরিবেশের বর্ণনা—সবকিছুই মাপা, নির্ভুল ও দৃশ্যমান। যেন পাঠক নিজেই সেই অভিযানের একজন সঙ্গী।

“বাঁদরের পা” শুধু একটি রহস্য–অ্যাডভেঞ্চার নয়; হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখার সহজতা এবং চিরকালীন আকর্ষণ এখানে আবারও প্রমাণ হয়।