হর্ষবর্ধন সমগ্র (১ – ৪ খণ্ডে সম্পূর্ণ)-এ রয়েছে মোট ৯৭ টি ছোটোগল্প, ৬টি উপন্যাস, ১টি নাটক ও বিবিধ লেখা

১৩৪১ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৩৪) ‘রামধনু’ পত্রিকায় হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন জুটির প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। গল্পের নাম ‘কলকাতার হালচাল’। ১৩৪২-এর চৈত্র পর্যন্ত চলে এই সিরিজ। তারপর আজীবন বর্ধন ভ্রাতৃদ্বয়কে নিয়ে অজস্র কাহিনি লেখেন শিবরাম চক্রবর্তী। ছোটোগল্পের পাশাপাশি উপন্যাস, নাটক, চুটকি এমনকী ছড়াও তিনি রচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় এই সিরিজে। ছোটোদের জন্য রচিত গল্পের পাশাপাশি প্রাপ্তমনস্ক লেখাও পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি। কিন্তু লেখকের অন্য অনেক লেখার মতোই এই রচনাগুলিও বেশিরভাগ হারিয়ে যেতে থাকে কালের গর্ভে। ‘অমনিবাস’, ‘সমগ্র’ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরবর্তীকালে যে বিভিন্ন সংকলন প্রকাশিত হতে থাকে তার সবই রয়ে যায় অসম্পূর্ণ। এমনকী ভিন্ন শিরোনামে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একই কাহিনিও সংকলিত হয় দুই মলাটের মধ্যে।

হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের কাহিনিগুলি সুসংহতভাবে বিন্যাস করার সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেন প্রাবন্ধিক-সংগ্রাহক-গবেষক সৌরভ দত্ত মহাশয়। ৫ অগাস্ট, ২০১৬ সালে blogus-abogusblog.blogspot.com ব্লগে প্রকাশ করেন তাঁর গবেষণার একটি ক্ষুদ্র নিদর্শন, ‘হাজির হলেন হর্ষবর্ধন’— হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের আত্মপ্রকাশের বৃত্তান্ত; যা কিনা আপামর পাঠকের কাছে ইতিপূর্বে অধরাই ছিল। দুঃখের কথা, সৌরভ দত্তর অকালপ্রয়াণে এই কাজ রয়ে যায় অসমাপ্ত। পরবর্তীকালে সুদীপ দেব তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজকে সম্পূর্ণ রূপ দেন।

তবে, শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনকে নিয়ে রচিত কাহিনিগুলির সংকলনগ্রন্থ সাধারণ পাঠকের সুবিধার্থে 'মান অনুযায়ী ন্যায্য ও সুলভ মূল্যে' ইতিপূর্বে প্রকাশ পায়নি। 'বুক ফার্ম' থেকে এই প্রথম সেইসমস্ত কাহিনি শিবরামের উত্তরাধিকারীর অনুমতিসাপেক্ষে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হল। এই কাজের প্রথম উদ্যোক্তা সৌরভ দত্তর স্মৃতির প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে তাঁকে এই গ্রন্থের প্রধান সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হল। রাখা হয়েছে শিবরাম-শৈল অবিচ্ছেদ্য জুটির স্বাক্ষরস্বরূপ শৈল চক্রবর্তীকৃত মূল অলংকরণগুলিও।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই বইয়ের শিরোনামে 'গোবর্ধন'-এর নাম নেই কেন? তার কারণ, এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি সবার প্রথমে ১৯৮৩ সালে 'হর্ষবর্ধন অমনিবাস' এনেছিল, এই শিরোনাম সেটা থেকেই আহরিত গ্রন্থের গুণমানের সঙ্গে আপোশ না করে পাঠকের সাধ্যের মধ্যে মূল্যমান নির্ধারণ করায় এই সংস্করণ আশা করি শিবরামপ্রেমী পাঠককুলের আনুকূল্য লাভ করবে।