দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর আগের কথা।

ট্রেনে, বাসে বা পথের ধারের বুক স্টলে পাওয়া যেত গোপাল ভাঁড়ের হরেক গল্পের বই। বটতলার জনপ্রিয় গোপাল ভাঁড়ের নির্ভেজাল হাসির গল্পের বই এবার ‘ফ্যাক্সিমিলি’-তে (অবিকল প্রতিরূপে) ফিরে এল ‘বুক ফার্ম’ থেকে। পুরোনো টাইপ ফন্ট, ভিন্টেজ ফ্লেভারে চিরকালীন গোপাল ভাঁড়ের যাবতীয় সব গল্প ‘সমগ্র’ আকারে। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ নারায়ণ দেবনাথ। নারায়ণ দেবনাথের সম্পাদনায় করা একমাত্র এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে। দীর্ঘ বছরের জনপ্রিয় এবং বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া দুষ্প্রাপ্য বইটি ফিরে এল তার প্রথম দিনের চেহারায়। বটতলার বইয়ের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখতে থাকছে পুরোনো দিনের টাইপ ফন্ট, বানান ও মূল অলংকরণ।

গোপাল ভাঁড়ের জীবনীঃ

নবদ্বীপ-অধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজধানীর অন্তর্গত ঘূর্ণি' নামক গ্রামে এক দরিদ্র ক্ষৌরকারের গৃহে গোপালের জন্ম হয়। বাল্যকাল হইতেই গোপাল মেধাবী ও প্রত্যুৎপন্নমতি ছিল! কিন্তু দুঃখের বিষয় গোপালের নয় বৎসর বয়ঃক্রম কালে পিতৃবিয়োগ হয়। একে দরিদ্রের সন্তান-তার উপর বাল্যে পিতৃবিয়োগ প্রভৃতি নানা কারণে অর্থাভাবে লেখাপড়া শিক্ষার বিশেষ কোন সুবিধা হইল না। গোপাল যেমন মেধাবী তেমনিই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন বালক ছিল। যদি বাল্যকালে বিদ্যাশিক্ষার কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইত, তাহা হইলে কালে বালক একজন মহানুভব ব্যক্তি বলিয়া পরিগণিত হইত।

গোপাল জাতিতে নাপিত ছিল। নাপিত জাতি স্বভাবতই বড় ধূর্ত'। গোপাল বাল্য বিদ্যাশিক্ষা না করিলেও তাহার বুদ্ধিবলে কেহই কোন বিষয়ে তাহাকে পরাজিত করিতে পারিত না!

গোপালের চেহারা দেখিলে লোক না হাসিয়া থাকিতে পারিত না। কিন্তু গোপাল নিজে বড় গম্ভীর প্রকৃতির লোক ছিল। পাঁচজনকে হাসাইতে এতই পটু ছিল যে, আজ পর্যন্ত আর কোন ভাঁড়ের সে গুণ দৃষ্ট হয় নাই।

নবদ্বীপ-অধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র লোক-পরম্পরায় গোপালের নানাবিধ গুণের কথা শুনিয়া গোপালকে তাঁহার রাজসভায় ডাকাইয়া আনিলেন। গোপালের সহিত কিছুক্ষণ আলাপ-পরিচয়ের পর মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র পরম সন্তুষ্ট হইয়া গোপালকে আশ্রয় দিলেন। গোপাল মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আশ্রয় লাভ করিয়া তাহার রসের ভাঁড় উজাড় করিয়া সকলকে তুষ্ট করিতে লাগিল।     ~~ সঙ্কলক